বাকলিয়ায় জোড়া খুন/ ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের ‘ডানহাত’ হাসান বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার
ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী, কয়লাঘরে চলে ৪ ঘণ্টার বৈঠক
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় জোড়া খুন মামলার অন্যতম আসামিকে ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জদের ‘ডানহাত’ হাসানকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে, বায়েজিদ এলাকা থেকে একটি আমেরিকান ৭.৬৫ পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আসামির নাম মো. হাসান (৩৭)। তিনি বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার পশ্চিম শহীদনগরের (সুবাহান কন্টাক্টর বাড়ি) মো. আলমের ছেলে।
শুক্রবার (২ মে) রাতে সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালীর হাতিয়া থানার নলের চরের ভূমিহীন বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হাসানের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। এরপর নোয়াখালীর হাতিয়া থানার নলের চরের ভূমিহীন বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বায়েজিদে তার ঘরের ড্রেসিং টেবিলের পেছন থেকে লুকিয়ে রাখা একটি আমেরিকান ৭.৬৫ পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাতে রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাক্সেস রোডের দিকে আসতে থাকে। গাড়িটি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকেও মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
গুলিতে গাড়িটিতে থাকা বখতিয়ার হোসেন (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩২) নামে দু’জন নিহত হন। তবে পুলিশের তালিকাভুক্ত আরেক ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বেঁচে যান। নিহত দু’জন সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের দাবি করেন, দুই সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী করে ক্ষুব্ধ হয়ে সরোয়ার ও তার অনুসারীদের ওপর এই হামলা চালানো হয়।
খুনের ঘটনায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ১ এপ্রিল বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহত বখতিয়ারের মা ফিরোজা বেগম। মামলার অপর পাঁচ আসামি হলেন—মো. হাছান ওরফে মেহেদী হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। তারা সবাই সাজ্জাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পরে ৩ এপ্রিল পুলিশ মো. বেলাল ও মো. মানিক নামের দুজনকে সিসিটিভি ক্যামেরায় শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে। ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার শুনানি শেষে দুই আসামির চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ৩০ মার্চ গভীর রাতে নগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে মো. সজীব (২৯) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৩১ মার্চ সজীব আদালতে জবানবন্দিতে জানান, দুজনকে খুনের আগে চার ঘণ্টা বৈঠক করেন সন্ত্রাসীরা। ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনের ডানহাত হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হাসানের নেতৃত্বে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া কয়লার ঘর এলাকায় এই সভা হয়।
তিনি আরও জানান, হাসান খুনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানান ইমন নামের একজনকে। ওই ইমন তার পূর্বপরিচিত। তাকে ঘটনার দিন সকালে ফোন করেন ইমন। একটি মোটরসাইকেল নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসতে বলেন। সজীব ও ইমন বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি মামলায় এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেই সুবাদে দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে।
সজীব ফটিকছড়ির একটি গ্যারেজ থেকে এক হাজার টাকায় ভাড়া করা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নগরীর অক্সিজেন মোড়ে এসে ইমনকে ফোন দেন। ইমন অক্সিজেনের পূর্ব দিকে কয়লার ঘর এলাকায় যেতে বলেন সজীবকে। ইমনের কথামতো সেখানে গিয়ে আরও সাত থেকে আটজনকে দেখতে পান তিনি। পরে সেখানে বসে তারা খুনের পরিকল্পনা করেন। তাদের সবার লক্ষ্য ছিল সাজ্জাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার হোসেনকে মেরে ফেলা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা কয়লার ঘরে ছিলেন। পরে সেখান থেকে দিবাগত রাত ১২টার পরে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন বালুমহাল এলাকায় যান। বৈঠকে হাসান তাদের সবকিছু বুঝিয়ে দেন। মূলত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সরোয়ারকে মারার জন্য পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনার দিন তার মোটরসাইকেলে অস্ত্র হাতে ছিলেন হাসান। সাতটি মোটরসাইকেলে অস্ত্র হাতে সরাসরি হত্যাকাণ্ড অংশ নেন সাত থেকে আটজন।
ডিজে