সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযান ঘুরেফিরে কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাটে, শত শত অবৈধ স্থাপনা বহাল তবিয়তে

সিডিএ’র জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় আবারো অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চার ঘণ্টার অভিযানে এস্কেভেটর দিয়ে শত শত দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে তাদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু মইজ্জ্যারটেক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় সিডিএর জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনায় কোনো অভিযান চালানো হয় না।

তবে সিডিএ বলছে, আগের তালিকাভুক্ত দখলদারদেরই উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে শত শত দোকান ভাঙা হয়।

অভিযানে অংশ নেয় সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলীরা, এস্টেট শাখার কর্মচারী ও সিএমপির সদস্যরা।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, কোনো লিখিত নোটিশ বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিডিএ হঠাৎ অভিযান চালিয়ে একতরফাভাবে দোকানপাট ধ্বংস করে দেয়। অথচ একই সড়কের মইজ্জ্যারটেক থেকে ডিসি রোড পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় সিডিএ’র জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনায় কোনো অভিযান চালানো হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন শুধু ব্রিজঘাটেই বারবার উচ্ছেদ অভিযান হয় এবং কারা এর পেছনে সুবিধাভোগী?

সিডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনজুর হাসান এবং এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান জানান, ‘আমরা পূর্বের তালিকাভুক্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি। এসব জমি ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সংরক্ষিত।’

জানা গেছে, এর আগেও ২০২৩ সালের ২৩ মে একই এলাকায় ২৫০টি দোকান একদিনে ভেঙে দেয় সিডিএ। তখনও অভিযোগ ছিল, বিনা নোটিশে অভিযান চালানোর। এবার মৌখিকভাবে বলা হলেও বাস্তবে উচ্ছেদ থেমেছে শুধু ব্রিজঘাট বাজারেই।

আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ সরকারি প্রক্রিয়ায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা ইজারা মূল্য ধার্য করে বাজারটি দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়। কিন্তু এর পর থেকেই বাজারটি বারবার উচ্ছেদের কবলে পড়ে। এর আগে ২০০৮ সালেও এমন ঘটনা ঘটে, যখন তৎকালীন পটিয়া ইউএনও বাজার ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিলে সিডিএ আপত্তি জানায়।

সিডিএ’র নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু বলেন, ‘এই জমি বাজারের খাসজমি নয়। এটি সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগ্রহণকৃত এবং বিএস খতিয়ানে সিডিএ’র মালিকানাধীন জমি।’

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সিডিএ বারবার চরপাথরঘাটা ভাসমান বাজার উচ্ছেদ করলেও, প্রকল্প অনুযায়ী মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত পুরো সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনায় কার্যত অভিযান চালানো হয় না। অথচ ব্রিজঘাট বাজার এই এলাকার শেষ প্রান্তে।

ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ ২০ বছরেও ব্রিজঘাট এলাকায় কোনো স্থায়ী বাজার বা সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়নি সিডিএ। ফলে তারা নিজের উদ্যোগে দোকান করে দিনযাপন করতেন। এখন আবারও উচ্ছেদে তাদের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান জাহেদ বলেন, ‘বারবার উচ্ছেদ অভিযানে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। কেন শুধুই গরিবদের দোকান ভাঙা হয়? কেন মইজ্জ্যারটেক থেকে পুরো এলাকায় একযোগে অভিযান চালানো হয় না?’

তিনি আরও বলেন, ‘সিডিএ চাইলে রাস্তার পাশে প্রয়োজনীয় স্থানে দোকানঘর নির্মাণ করে ইজারা দিতে পারে। এতে সংস্থাটির রাজস্ব বাড়বে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। কিন্তু বারবার উচ্ছেদ করে মানুষের সহায়-সম্পদ ধ্বংস করলে, তা যে শুধু অবিচার নয়—বরং গভীর মানবিক সংকটও তৈরি করে, সেটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’

চরপাথরঘাটা এলাকার অনেক ব্যবসায়ীও একই দাবি জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, ‘কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকার বাজার ও ঘাটসংলগ্ন যে বড় জমিটি রয়েছে, সেখানে একটি আধুনিক মার্কেট এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে এবং আমি বর্তমানে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছি। ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। কীভাবে এই প্রকল্পে তাদের উপকারভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা আমরা ভেবে দেখছি।’

ব্রিজঘাট থেকে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্প বহু আগেই শেষ করেছে সিডিএ। তবে সড়কের দুই পাশে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার বারবার উচ্ছেদের শিকার হয়ে আসছে।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm