চট্টগ্রামের আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত ঢাকাইয়া আকবর মারা গেছেন। প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হয়ে তিনদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে রোববার (২৫ মে) সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
খবরটি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক।
নিহত আকবরের বাড়ি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়। বাবার নাম মঞ্জু মিয়া। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। আকবর এলাকায় মূলত পরিচিত ছিলেন আরেক কারাবন্দী আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের চিরবৈরী প্রতিপক্ষ হিসেবে।
পতেঙ্গায় সেই আতঙ্কের রাত
গত শুক্রবার (২৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের ২৮ নম্বর দোকানের সামনে আকবর তার সঙ্গী ও এক তরুণীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় মোটরসাইকেলে আসা চার যুবক আকবরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন পথচারী বাকী (৩০) ও শিশু মহিম ইসলাম রাতুল (৮)। ঘটনার পর সৈকতজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চোখের সামনে গুলির দৃশ্য দেখেছেন অনেক দর্শনার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির শব্দে লোকজন দিকবিদিক ছুটতে থাকেন। পালাতে গিয়েও গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আকবর।
ফেসবুক লাইভেই আগুন জ্বালিয়েছিলেন আকবর!
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাইয়া আকবর দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হোসেন এবং তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে নিয়ে কটূক্তি, হুমকি এবং ব্যঙ্গ করতেন। এরই জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পাল্টা ভিডিওবার্তায় তামান্নাও তাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ সাজ্জাদ হোসেন ঢাকার একটি শপিংমল থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর ২৯ মার্চ চট্টগ্রামের বাকলিয়া এক্সেস রোডে সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে লক্ষ্য করে চালানো গুলিতে দুজন নিহত হন। যদিও সরোয়ার প্রাণে বেঁচে যান।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ওই হামলার পেছনে ছিল ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধসহ অন্তত পাঁচটি জটিল কারণ। আদালতে গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া জবানবন্দিতেও এসব তথ্যের প্রমাণ মিলেছে।
অনলাইনের দ্বন্দ্ব থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখলযুদ্ধ
পুলিশ বলছে, আকবরের মৃত্যু চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন করে উত্তেজনার আগুন ছড়াতে পারে। তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ফেসবুক লাইভে ব্যক্তিগত আক্রমণ, পুরনো শত্রুতা ও আর্থিক দ্বন্দ্বকে। তদন্ত চলছে বহুমুখী দিক বিবেচনায় রেখে।
জেজে/সিপি