চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার আউটার রিং রোড চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ইউসুফ আলীকে মারধরের ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে ‘মব’ সৃষ্টি করে মারধরের এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে সমুদ্র সৈকতে গাঁজা খেতে বাধ সাধায় মোবাইল ডিউটিতে থাকা পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলীকে পরিকল্পিত ‘মব’ তৈরি করে মারধর করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এ সময় তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ছাড়াও ছিনিয়ে নেওয়া হয় ওয়্যারলেস সেট।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম জানিয়েছেন, ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল, মানিব্যাগ ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই দুই যুবকের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি চাকু ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পতেঙ্গা মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
ঘটনায় জড়িত যে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়, তারা হলেন—সাইমন (২৭) ও আলী ইমাদ প্রকাশ তাফসির ইমাদ (২২)।
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
এদিকে উপ-পরিদর্শক ইউসুফ আলীকে ‘মব’ সৃষ্টি করে মারধরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক ডাবলু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
পুলিশের ইন্সপেক্টর থেকে অধস্তনদের নিয়ে গড়া এই সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন আউটার রিং রোড এলাকায় এসএপিএল ডিপো থেকে ২০০ গজ সামনে মহাসড়কের পাশে চেকপোস্টে ডিউটি করাকালীন দুজন দুষ্কৃতিকারী মোটরসাইকেলযোগে এসআই ইউসুফ আলীর কাছে এসে ‘আপনি তো ভুয়া পুলিশ, আপনার আইডি কার্ড কই?’ ইত্যাদি পরিকল্পিত প্রশ্ন করে তাকে ভুয়া পুলিশ বানানোর চেষ্টা করে। দুষ্কৃতিকারীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের আরও সহযোগীদের ঘটনাস্থলে জড়ো করে উক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘মব’ বানিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করারা পাশাপাশি তার মোবাইল, মানিব্যাগ, ওয়্যারলেস ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইউসুফ আলীকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
যা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে
জানা গেছে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে স্থানীয় কিছু যুবক নিয়মিতই গাঁজা সেবন করে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে মোবাইল ডিউটিতে থাকা পতেঙ্গা থানার এসআই ইউসুফ আলীর চোখে পড়ে কিছু যুবক গাঁজা সেবন করছে। সামনে এগিয়ে যুবকদের তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর একপর্যায়ে যুবকরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে মাফ চাইলে সতর্ক করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
৩৬তম ব্যাচের এসআই ইউসুফ আলী তার চাকরিজীবনের শুরু থেকে ছিলেন নৌ-পুলিশে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নৌ-পুলিশের বাইরে তার প্রথম পোস্টিং হয় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) পতেঙ্গা থানায়। ফলে স্থানীয় অপরাধীচক্র সম্পর্কে তার ধারণাও ছিল না। এস আই ইউসুফ সহজ-সরল প্রকৃতির লোক বলে জানান তার সহকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভুল স্বীকার করে মাদকাসক্ত যুবকের দল ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তারা আরও বেশকিছু লোককে সঙ্গে করে পতেঙ্গা সৈকতে ফিরে আসে। এ সময় এসআই ইউসুফ তার সঙ্গে থাকা টহল গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তার আগেই যুবকরা এসে তাকে প্রশ্ন করে— ‘আপনি তো ভুয়া পুলিশ। আপনার আইডি কার্ড কই?’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই যুবকেরা মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ে এসআই ইউসুফের ওপর। তাকে এ সময় এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা একটি ভিডিওতে এসআই ইউসুফকে কাঁদতে দেখা যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘আমার মোবাইল মানিব্যাগ ওয়্যারলেস সব নিয়ে গেছে ওরা।’
তার গায়ে আঘাতের লাল লাল ছোপ দেখা গেছে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে এসআই ইউসুফ বলছিলেন, ‘আমার মানসম্মান সব গেছে।’
ভিডিওর একপর্যায়ে অচেনা কিছু যুবককে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ইউসুফের পকেটে ঢুকিয়ে যেতে দেখা গেছে।
সিপি