রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি ছাড়াই সাড়ে ১০ লাখের ভ্রমণ বিল, নথি জব্দ

চট্টগ্রাম রেলের ডিসিও দপ্তরে দুদকের হানা

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে বিল-ভাউচার ছাড়াই প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্রমণ ব্যয় তুলে নেওয়ার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় বেশ কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বিলের তথ্য রেজিস্ট্রার খাতায় সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এমননি চেক রেজিস্ট্রার বইয়েও নেই বিল নেওয়ার কোনো তথ্য।

রোববার (২ মার্চ) দুপুরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বিভাগীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কার্যালয়ে দুদক অভিযান চালায়। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিাচলনা করেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিল-ভাউচার ছাড়াই ভ্রমণ বিল বাবদ ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৮ টাকা তুলে নেওয়া হয়। অর্থনৈতিক কোড-৩২৪৪১০১ (ভ্রমণ ব্যয়) থেকে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়নি, এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিল পাসিং রেডিয়ারেও ওইসব বিলের কোনো এন্ট্রি বা তথ্য পাওয়া যায়নি। রেলওয়ের জেনারেল কোড ৮০৭(১) অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, তা মানা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন জানান, হিসাব শাখা থেকে যেসব বিলের তথ্য আসে, সেই অনুযায়ী আমি স্বাক্ষর করি। আমি বিভাগীয় নিয়ম পালন করি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। দুদক রেকর্ডপত্র যা চেয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ আলম বলেন, ‘আমরা রেলের অর্থ বিভাগে বিভিন্ন সংস্থাপন কর্মকর্তা ও বিভাগীয় পারসোনাল কর্মকর্তা দপ্তরে গিয়েছি। রেজিস্ট্রার বইয়ে বিলের রেকর্ডপত্র না থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। অনেকগুলো বিল-ভাউচার রেজিস্ট্রারে উঠানো হয়নি। সেখান থেকে কিছু রেকর্ডপত্র নিয়েছি। বাকি কিছু রেকর্ডপত্র তাদের কাছ থেকে চেয়েছি। এসব রেকর্ডপত্র পাওয়া পর বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবরে পাঠানো হবে।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘সাড়ে ১০ লাখের ‘গায়েবি’ ভ্রমণ বিল চট্টগ্রাম রেলে, অডিটে ধরা‘—শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভুয়া ভাউচারে ভ্রবণ বিল উত্তোলনের দুই মাস আগে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিসিও) জানানো হলেও এখনও কোনো বিল-ভাউচার খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওই সময় পরিবহন অডিট অধিদপ্তর থেকে অডিট আপত্তির ঘটনা চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (ডিএফএ) ভুয়া বলে দাবি করলেও ডিসিও চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর ডিসিও বরাবরে ‘অডিট মেমো’র মাধ্যমে বিল-ভাউচার ছাড়া ভ্রমণ ব্যয় তোলার বিষয়টি জানানো হয়।

ওই অডিট মেমোতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিল-ভাউচার ছাড়াই ভ্রমণ বিল বাবদ ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৮ টাকা তুলে নেওয়া। এতে সরকারের ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আইবাস++ হতে প্রাপ্ত পরিশোধিত বিল ও ভাউচার পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থনৈতিক কোড-৩২৪৪১০১ (ভ্রমণ বায়) হতে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়নি, এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিল পাসিং রেডিয়ারেও উক্ত বিলের কোন এন্ট্রি বা তথ্য পাওয়া যায়নি। রেলওয়ের জেনারেল কোড ৮০৭(১) অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেরূপ সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যেরূপ একজন মিতব্যয়ী ব্যক্তি তার নিজের অর্থ ব্যয় করেন।

পাহাড়তলীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কার্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভ্রমণ বিল উত্তোলনের তালিকায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ জুলাই একদিনে চার টোকেনে ১৮ হাজার ৮৭৫ টাকা, ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৭ টাকা, ৭৭ হাজার ৮০৫ টাকা, ৩২ হাজার ৬৩৭ তোলা হয়।

১১ জুলাই তিন টোকেনে ১৯ হাজার ৭৪৭ টাকা, ৭৭ হাজার ৮০৫ টাকা ও ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৭ টাকা; ৩ আগস্ট ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকা, ৪ অক্টোবর ১৪ হাজার ১৬০ টাকা, ১৭ অক্টোবর ৪ হাজার ৩৭৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়।

৬ নভেম্বর ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকা, ২৪ হাজার ৭২৯ টাকা; ১২ নভেম্বর ৯ হাজার ৩২০ টাকা; ২২ নভেম্বর ১৩ হাজার ১২৫ টাকা এবং ৩ ডিসেম্বর ৯ হাজার ৪৪০ টাকা ভ্রমণ বিল তোলা হয়।

২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তোলা হয় ১৭ হাজার ৬০০ টাকা; ২২ এপ্রিল ৪৭ হাজার ৩২০ টাকা।

সবচেয়ে বেশি টাকা তোলা হয় চলতি বছরের ২৩ জুন। ওইদিন সাতটি টোকেনে ৪৮ হাজার ৬৮৫ টাকা, ১৪ হাজার ৭৯৮ টাকা, ৫৬ হাজার ৬০৫ টাকা, ৮৯ হাজার ৪৭৪ টাকা, ৭১ হাজার ১৩৪ টাকা, ৪০ হাজার ৫৬৫ টাকা ও ৫১ হাজার ৮৭০ টাকার ভ্রমণ বিল তোলা হয়।

রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় রেললাইন ও স্টেশন পরিদর্শনসহ নানান কাজে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। এজন্য তাদের ভ্রমণ ব্যয় দেওয়া হয়। কোন খাতে কি পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার ভাউচার অর্থ বিভাগে জমা দিয়ে ভ্রমণ বিল পাশ করতে হয়। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব নিয়ম মানা হয়নি।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm