চট্টগ্রাম নগরীর খাল ও নালার ভেতর দিয়ে ওয়াসার পানির সাব লাইনগুলো বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল লাইন থেকে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় ছোট পাইপের মাধ্যমে লাইন টানা হয়েছে। ফলে খাল ও নালায় ঝুলে পড়া এসব পাইপের কারণের পানি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। এর মধ্যে অনেক পাইপলাইনই অবৈধ, পানি চোরচক্র এসব লাইন থেকে প্রতিদিনই পানি চুরি করছে।
একইসঙ্গে পাইপে খাল ও নালার ময়লা-পলিথিন আটকে থেকে পানি ফুলে ফেঁপে ওঠছে। অনেক সময় পাইপে পলিথিন জট বেঁধে পানি রাস্তায় গড়াচ্ছে। এসব কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এছাড়া ওয়াসার পাইপের পানির সঙ্গে খাল ও নালার নোংরা পানি প্রায়ই মিশছে। এসব পানি খেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মূলত যেখানে-সেখানে ওয়াসার পানির জন্য ছোট ছোট পাইপ ব্যবহার, খাল ও নালায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দোকান এবং নিয়মিত পরিস্কারের অভাবে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ইপিজেড থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিন দেখা গেছে, আকমল আলী রোডের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা খালের বেহাল দশা। একই অবস্থা ওই এলাকার ছোট-বড় নালার। খাল ও নালার মধ্যেই বিভিন্ন বাসা-বাড়ি এবং বাণিজ্যিক স্থাপনায় নেওয়া হয়েছে ওয়াসার ছোট ছোট পাইপলাইন। খালের এক পার থেকে অপর পারে যাওয়ার জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে কাঠ ও বাঁশের সাঁকো, আবার অনেকে সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে ব্রিজও তৈরি করেছেন।
এছাড়া সিমেন্ট ক্রসিং, কাজির গলি, নেভী হাসপাতাল গেট, বন্দরটিলা আয়েশার মার গলিসহ নিউমুরিং রোডের ড্রেনগুলোরও একই চিত্র। নারিকেল তলা, হক সাহেবের গলিসহ আশপাশের এলাকায় খাল ও নালার ওপর অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে দোকানপাট। এসব দোকানের খুঁটি বসানো হয়েছে খাল ও নালার মধ্যে।
এদিকে মাদ্রাজি শাহ পাড়া রোডে নালায় ময়লার জটের কারণে পানি সড়কে জমে থাকতে দেখা গেছে। এলাকার বাসিন্দারা এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
জানা গেছে, ইপিজেডের এসব এলাকায় ওয়াসার ছোট ছোট পাইপ লাইনে খাল ও নালায় জট লেগে গেছে। কিছু কিছু বৈধ পাইপলাইন হলেও বেশিরভাগই অবৈধ। এসব অবৈধ লাইন থেকে প্রতিদিনিই পানি চুরি করছে একটি চক্র। আর এসব কাজে ওয়াসার কিছু কর্মচারীরও যোগসাজশ আছে।
ওয়াসার পাইপগুলোর কারণে খাল ও নালায় ময়লা এবং পানি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। প্রতিবছর বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতে খাল-নালা ফুলে ফেঁপে ওঠে পানি রাস্তায় গড়ায়। একইসঙ্গে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ব্রিজ ও দোকানগুলোর কারণে খাল পরিস্কারে বেগ পেতে হয়।
এসব অবৈধ দখলবাজদের কারণে বন্দরটিলা সিটি কর্পোরেশন অফিসের পেছনে বেপজা কলেজ রোডের খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। খালের ওপর গড়ে ওঠেছে দোকানপাট।
আকমল আলী রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাল ও নালাগুলো প্রতি বছর পরিস্কার করা হয় না। এলাকার মানুষকে ঠিক মত ওয়াসা পানি দিতে পারে না, তাই তারা বাধ্য হয়ে নালা ও খাল দিয়ে ওয়াসার পানির পাইপ ব্যবহার করছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব পানির পাইপের কারণে এলাকার প্রতিটি নালা ও খাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। রাস্তা-নালা-খাল, এখন সমান হয়ে গেছে। তাই অল্পতেই পানি জমে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’
ইপিজেড নিউমুরিং রোডের বাসিন্দা চট্টগ্রাম বধির উন্নয়ন সংঘের সহ-সভাপতি সওকত আলী খাঁন বাদল জানান, এখানকার নালাগুলো নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না। ড্রেনের মধ্যে ওয়াসা ও গ্যাস লাইনের কারণে ময়লা জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনের ওপর ভাসমান টং দোকান তৈরি ও এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা সরাসরি ড্রেনে ফেলে। গত বছর বর্ষায় পানি জমে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এলাকাবাসীকে। সিটি কর্পোরেশনের জরুরি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা দরকার।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল বলেন, ‘সবার আগে এলাকার জনগণকে সচেতন হতে হবে। নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে ওয়ার্ডের অবৈধ খাল দখল, দূষণ ও ভরাটসহ বিভিন্ন অনিয়ম এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নের বিষয়ে তালিকা তৈরি করে মেয়রকে জানানো হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, নালা ও খালের ভেতর দিয়ে ওয়াসার লাইন টানার কোনো নিয়ম নেই। ওয়াসার সার্ভিস লাইন হবে মাটির নিচ দিয়ে। তবে এলাকার কিছু মানুষ অতি উৎসাহিত হয়ে সংযোগ দিচ্ছে মেইন লাইনের সঙ্গে। আমরা এর মধ্যে যারা এলোমেলোভাবে সংযোগ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ওয়াসার পানির সঙ্গে নালার পানি মিলে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘খাল ও নালায় সংযুক্ত ওয়াসার লাইনগুলোর মধ্যে যদি কোনো একটি লাইনে লিকেজ থাকে, তাহলে ভালো পানির সঙ্গে ময়লা পানি মিশে যায়। সে পানি পান করে নানান রোগে আক্রান্ত হতে পারে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। বিষয়টি আমি সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করবো।’
এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ডিজে