কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুপ্ত খাল। পাহাড়ি ঢল থেকে তৈরি হওয়া এসব গুপ্ত খালে পর্যটকরা না জেনে নেমে প্রাণ হারাচ্ছেন। আবার অনেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার সত্ত্বেও সৈকতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে পানির নিচে থাকা এসব মৃত্যুফাঁদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন তারা। ১৪ ঘণ্টায় ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন সমুদ্রের পানিতে ডুবে। এদের মধ্যে তিনজন ছিলেন পর্যটক।

রোববার (৮ জুন) রাত ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ছয় জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পর্যটক ছিলেন। এছাড়া দুটি লাশের এখনও কোনো পরিচয় মেলেনি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, সদর থানা এলাকার মধ্যে পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানে তিনজন পর্যটক ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা। আরেকটি অজ্ঞাত গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিন পর্যটকের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার হয় রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে সৈকতের ডায়াবেটিস পয়েন্টে। তিনি চট্টগ্রামের ডিসি রোড এলাকার নজির আহমদের ছেলে মো. রাজিব। তিনি বিকাল ৫টার দিকে সী-গাল পয়েন্টে গোসল করতে নেমে ভেসে যান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাগরের নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হয় কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার নুরু সওদাগরের মরদেহ। তিনি রোববার বিকালে মাছ ধরতে গিয়ে সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে ভেসে যান।
এরপর বেলা ১২টার দিকে খুরুশকুলের আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন এলাকা বাঁকখালীর মোহনা থেকে উদ্ধার হয় আরও একটি অজ্ঞাত গলিত মরদেহ। যার পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে অন্য দুই পর্যটক বাবা-ছেলে একসঙ্গে গোসলে নেমে ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয় সৈকতের সায়মন পয়েন্ট থেকে। লাইফগার্ডকর্মীরা উদ্ধারের পর তাদের হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্যু হয়। নিহত দুইজন হলেন—রাজশাহীর শাহীনুর রহমান ও তার ছেলে সিফাত।
অন্যদিকে রামু থানার ওসি মু. তৈয়বুর রহমান জানান, সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ির পেঁচারদ্বীপ এলাকায় সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একটি মরদেহ উদ্ধার হয়। যার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।
সি-সেইফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মী সাইফুল্লাহ সিফাত জানান, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নেমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গুপ্ত খালের তৈরি হয়। যেখানে পড়লেই বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটকরা। নির্দিষ্ট স্থানে গোসলে না নেমে এর বাইরে গোসলে নামলেই মিসিং হচ্ছেন। তারপরও লাইফগার্ড চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আজ সকাল থেকেই বিপদগ্রস্ত ছয় জনকে আমরা জীবিত উদ্ধার করেছি।
সিফাত জানান, যে পরিমাণ পর্যটক, মাত্র ২৭ জন লাইফগার্ডকর্মী দিয়ে সম্ভব নয়। তাও আবার দুই শিফটে ভাগ হয়ে ১৩ জন করে তারা দায়িত্ব পালন করেন। যা খুবই অপ্রতুল।
বিগত কয়েকবছর ধরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অধীনে সি-সেইফ লাইফ গার্ড কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাজ করে থাকেন।
ডিজে