মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী চলছে ‘কঠোর লকডাউন।’ লকডাউন ২১ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বাড়ানো হয়েছে আরও এক সপ্তাহ। তবে চলমান বিধিনিষেধের সময় বাড়ালেও কিছু শর্ত শিথিল করা হতে পারে। ইতোমধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া গণপরিবহন চলাচল বন্ধের শর্ত শিথিল করা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার বিধিনিষেধ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় বসেন বেশ কয়েকজন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় শর্ত শিথিলের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ রাখার জন্য কয়েকজন সচিব মত দিয়েছেন। এরফলে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া এবং সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি অনুমতি দিলেই বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।’
ইতোমধ্যে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগের জন্য গত ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। আবেদনে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার বিষয়ে প্রস্তাব করেছে তারা।
সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আগামী সোমবার থেকে যেন সারাদেশের দোকান ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী আমাদের কোনো দাবি ফেলেননি, এ দাবিও ফেলবেন না বলেই বিশ্বাস।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ঈদের আগে ‘লকডাউন’ শিথিলের চিন্তা-ভাবনা করছে। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্য ‘লকডাউন’ শিথিল হতে পারে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে এ বিধিনিষেধ আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু ছিল।
এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য অফিস ও সব ধরনের পরিবহন এবং শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখা ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে শিল্প-কারখানার কার্যক্রমের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।