করোনা টেস্টেই গোলমাল: চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২৬৫ জ্বরের রোগী, পরীক্ষা শুধু ৯ জনের!
আরডিটিতে নেগেটিভ, কিন্তু পিসিআরে পজিটিভ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর দীর্ঘ লাইন হলেও হচ্ছে না করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা। পাঁচদিন আগে পর্যাপ্ত কিট আসলে বহির্বিভাগে নমুনা সংগ্রহ বুথ চালু হয়। কিন্তু সেই বুথেও কোনো নমুনা জমা পড়েনি। সন্দেহজনক রোগীদের শুধুমাত্র আরডিটি (দ্রুত ডায়াগনস্টিক টেস্ট) পরীক্ষা দিচ্ছেন ডাক্তাররা, তাও সীমিত আকারে। সোমবার (১৬ জুন) মেডিসিন বহির্বিভাগে ২৬৫ জন জ্বর আক্রান্ত রোগী আসলেও আরডিটি করানো হয়েছে মাত্র ৯ জনের, এর মধ্যে একজনের পজিটিভ এসেছে।
একই অবস্থা জেনারেল হাসপাতালেও। হাসপাতালে শুধুমাত্র আরডিটি টেস্ট করানো হচ্ছে। কোনো ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে না। এর মধ্যে সোমবার ২ জনের আরডিটি পরীক্ষা করা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা শনাক্তের জন্য আরডিটি ও আরটি-পিসিআর দুটো পরীক্ষাই দিতে বলা হয়েছে।
ডাক্তারদের মতে, আরটি-পিসিআরে রিপোর্ট প্রায় ৮০ ভাগ সঠিক হয়। এটি মনিকুউলার প্রসেস। আর আরডিটি রেগুলার প্রসেস। এটিতে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়, তাই নেগেটিভ হওয়ার সম্ভবনায় বেশি। পরে বেশিরভাগ নেগেটিভ রোগীর ফলাফল আরটি-পিসিআরে পজিটিভ হয়।
সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলের এনসিলারি ভবনের নিচতলার বহির্বিভাগের মেডিসিন ফ্লু কর্নারে রোগীর দীর্ঘ লাইন। সবাই জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে। টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে একের পর এক রোগী ডাক্তার দেখাচ্ছিলেন। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের মনে ছিল শঙ্কা।
এদিন মেডিসিন বহির্বিভাগে ২৬৫ জন রোগী ছিলেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে আরডিটির জন্য ডাক্তার সার্টিফাইড করেন। এর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত রোগীর মধ্যে কারোরই করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। এমনকি আরটি-পিসিআর ল্যাবেও কোনো নমুনা পাঠানো হয়নি কালেকশন বুথ থেকে। এর মধ্যে সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কালেকশন বুথেও কেউ ছিলেন না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘আরডিটি করে ২ ঘণ্টা পর ফলাফল জানতে পারছেন রোগী। কিন্তু আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল নিশ্চিত হওয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ী রোগীকে আরডিটি ও আরটি-পিসিআর দুটো করানোর নির্দেশনা রয়েছে। আরডিটিতে ফলাফল নেগেটিভ হলেও অনেক সময় আরটি-পিসিআর ল্যাবে ফলাফল পজিটিভ চলে আসে। আরটি-পিসিআরে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সঠিক হয়। এটি একটি মনিকুউলার প্রসেস। আরডিটি একটা রেগুলার প্রসেস। তাৎক্ষণিক ফল পাওয়ার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়। তাই আরডিটিতে রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পসিবিলিটি বেশি হয়। পরবর্তীতে সেটি আরটি-পিসিআরে পজেটিভ হয়।’
এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের করোনার গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য নেই। আগের দিন রোববারও ছিল একই অবস্থা। এমনটি কেন হচ্ছে—জানতে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীরের আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন না দেওয়ায় আমরা আমাদের পরিসংখ্যানে সংযুক্ত করতে পারিনি। এ বিষয়ে আমি কঠোর নির্দেশনা দেবো, যাতে কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক তাদের আপডেট পাঠাতে বিলম্ব না করে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. হামিদ হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যাদের সাসপেক্ট মনে করছি, তাদেরই আরডিটি করতে দিচ্ছি। আর যেসব রোগী বিভিন্ন ক্রনিক্যাল ডিজিজে আক্রান্ত, তাদের আরটি-পিসিআর দিচ্ছি। এতে কোন ফলাফলটা ফলস নেগেটিভ ও পজিটিভ ডিটেইল বোঝা যায়।’
কিন্তু নমুনা ল্যাবে যাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বুথে রোগী যদি না যায়, নমুনা যদি না দেয়, সে দোষ তো ডাক্তারের না। আসলে করোনা এতটা স্প্রেড না। তাই আরটি-পিসিআর নমুনা পরীক্ষার দিকে ঝুঁকছি না। আসলে আমরা যাকে সাসপেক্ট করব, তাকে টেস্ট দেবো। আমরা তো বুঝি কোনটা করোনা রোগী, কোনটা না।’
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১৫ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ৯ জন, এপিক হেলথ কেয়ারে ৩৪ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৩৬ জন নমুনা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পজিটিভ হয়েছেন ৯ জন। যাদের ৬ জন নগরের ও ৩ জন উপজেলার বাসিন্দা। তবে করোনায় চলতি বছরে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
ডিজে