
বাংলাদেশে এখন প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানেই না যে তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। দেশে মৃত্যুর প্রায় ১০ শতাংশ ঘটে এই রোগজনিত জটিলতায়। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুর কারণ হিসেবে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস সপ্তম স্থানে রয়েছে।
ঝুঁকির নেপথ্যে অজানা ভয়
ডায়াবেটিস শনাক্ত না করা গেলে বা নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এর জটিলতা মারাত্মক হয়ে ওঠে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই রোগে মারা যায়। আশ্চর্যের বিষয়— প্রতি দুইজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজন জানেন না যে তিনি আক্রান্ত। অথচ রোগের প্রাথমিক স্তর থেকেই জটিলতা শুরু হয়।
রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়ে পায়ের অনুভূতি কমে যায়, ক্ষত শুকাতে সময় নেয়, কখনো গ্যাংগ্রিন হয়ে পা পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। অতিরিক্ত ওজন থেকে ফ্যাটি লিভার, অল্প কায়িক শ্রম ও অতিরিক্ত তেলচর্বিযুক্ত খাবার থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতা ও চোখের সমস্যা দেখা দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি ত্বকের রোগ ও অন্য যেকোনো সংক্রমণও বাড়তে পারে।
চিকিৎসার মূল কথা
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছিলেন, এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে তিনটি ‘D’ এবং দুটি ‘E’-এর ওপর—
D মানে Diet (খাদ্যব্যবস্থা), Discipline (শৃঙ্খলা), Drug (ঔষধ);
E মানে Exercise (ব্যায়াম) ও Education (শিক্ষা)।
প্রথম চিকিৎসা খাদ্য। তাই রোগীকে প্রতিদিন ৫ বেলা খাবার খেতে হবে সময়মতো ও পরিমাণমতো। ময়দার পরিবর্তে আটার খাবার খেলে উপকার মেলে। আঁশযুক্ত খাবার, মৌসুমি ফল ও টাটকা সবজি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। সপ্তাহে তিন দিন মাছ খাওয়া এবং অন্তত ৫ দিন ১৫০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। দেহের ওজন রাখতে হবে আদর্শ সীমায়।
যা বন্ধ করতে হবে
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ধূমপান, চিনি–গুড়–মধু খাওয়া—সব বাদ দিতে হবে।
কর্মস্থলে সচেতনতা জরুরি
দিনের বড় সময়টা কাটে কর্মস্থলে। তাই সেখানে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে সারাদিন বসে থাকা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়।
খাবারকে ভাগ করে দিনে ৫–৬ বারে খেতে হবে, ৪ ঘণ্টার বেশি খালি পেটে থাকা যাবে না এবং ২ ঘণ্টার বেশি একটানা বসে থাকা ঠিক নয়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, অবসরে প্রিয় বিনোদনে যুক্ত থাকতে হবে— গান শোনা, সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা হালকা হাঁটা।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন, এমনকি অফিসের ভেতরও অল্প হাঁটাচলা করতে পারেন।
এখনই সময় ডায়াবেটিসকে চেনার, জানার এবং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়ার— নিজের ও সহকর্মীদের জন্য।
লেখক: ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড ও পার্কভিউ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড ও চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন


