চট্টগ্রামে কানপাকার রোগীরা বড় বিপদে পড়ছে অবহেলার জেরে

পর্দায় ছিদ্র হওয়ার পর ছোটেন ডাক্তারের কাছে

0

কানপাকা রোগ অনেকে ছোট সমস্যা বলে মনে করেন। কিন্তু এই ছোট রোগের সময়মতো চিকিৎসা না করিয়ে অনেক সময় রোগীদের হারাতে হয় শ্রবণশক্তি। অনেকে কানে ছিদ্র হওয়ার পর শরণাপন্ন হন ডাক্তারের। কানের চিকিৎসকদের মতে, কানের পর্দা ছিদ্র হলেই কানপাকা রোগ হতে পরে। শুধুমাত্র অসচেতনতার কারণে এসব রোগীরা অকালেই কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

জানা যায়, কানে ব্যথা সাধারণত বাচ্চাদের বেশি হয়। তবে যেকোনো বয়সে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ সাধারণত এক কানে হয়ে থাকে, তবে উভয় কানেও হতে পারে। ব্যথা একটানা অথবা কিছুক্ষণ পরপর হতে পারে। ব্যথার সঙ্গে কানে কম শোনা, শোঁ শোঁ আওয়াজ করা ও বন্ধ অনুভব হতে পারে।

কানের ডাক্তাররা জানান, কানের তিনটি অংশ রয়েছে−বাইরের অংশ বা বহিঃকর্ণ, মাঝখানের অংশ বা মধ্যকর্ণ, গভীরের অংশ বা অন্তঃকর্ণ। কানপাকা মধ্যকর্ণের একটি রোগ। মধ্যকর্ণে যখন কোনো ঘা হয় অথবা মধ্যকর্ণ ও বহিঃকর্ণের মাঝখানের পর্দা যদি ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়, তখন এটিকে কানপাকা বলা হয়। এই সমস্যায় কান দিয়ে পানি পড়ে, পুঁজ বের হয়। রোগী কানে কম শোনেন, কানে ব্যথা এবং শব্দ হয়। অনেক সময় মাথা ঘোরাতেও পারে।

নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ডা. আলমগীর মো. সোয়েব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কানে ব্যথা সাধারণত বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সেই আমরা কানে ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারি। এটি এক কান অথবা উভয় কানে হতে পারে। কানে ব্যথা হতে পারে। কানে শোনা কম হতে পারে এবং কখনও কখনও বন্ধ অনুভব হতে পারে। কানপাকা রোগে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে গেলে কানপাকা ভালো হয়ে যায়। প্রথমে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় পর্দায় কোনো ছিদ্র আছে কিনা। এছাড়া শোনার এবং আরও কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কানপাকা রোগ আছে কিনা। এটি মধ্যকর্ণের রোগ হলেও চিকিৎসা নিতে দেরী হলে অন্তঃকর্ণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় রোগীর মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, এই রোগে দু’ধরনের চিকিৎসা হয়—সেভ ভেরাইটি (নিরাপদ থাকলে) এবং আনসেভ ভেরাইটি (ঝুঁকি থাকলে)। আনসেভ ভেরাইটির ক্ষেত্রে কান দিয়ে পানি কম বের হবে। তবে দুর্গন্ধ হবে, কানে অনেক কম শুনবে। দ্রুত সার্জারি করা হলে এই রোগ ভালো হয়। আর সেভ ভেরাইটি হলে কান ভালোভাবে পরিষ্কার করে সিসটেমিক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নেজাল ডি কনজাসটেন দেওয়া হয়। এছাড়া সিসটেমিক ডি কনজাসটেন ও অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধও দেওয়া হয়। এভাবে সাতদিন ওষুধ দিয়ে দেখা হয়। যদি শুষ্ক হয়ে যায় তবে কানের পর্দা ভালো করতে অপারেশন করা হয়।’

Yakub Group

চিকিৎসা না করালে কী কী জটিলতা হতে পারে—জানতে চাইলে ডা. সোয়েব বলেন, ‘কানপাকার ফলে অন্তঃকর্ণে সমস্যা হতে পারে। আমাদের মুখের গুরুত্বপূর্ণ ফেসিয়াল নার্ভ আক্রান্ত হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে। মধ্যকর্ণের হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে অনেক সময় ফোঁড়া হয়। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে রোগী মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

কানপাকায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় বলেন, ‘অবহেলা এই রোগের প্রধান কারণ। অনেকে বারবার ঠাণ্ডা লাগলেও সেটি অবহেলা করেন। মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অবহেলা করেন। অনেকে জানে না কীভাবে দুধ খাওয়াতে হবে। এটিও একটি বড় কারণ। কেননা নাক এবং গলার সংযোগ নালিতে ইউসটিশন টিউব থাকে। এই টিউবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়। তাদের টিউবটি মোটা, ছোট এবং আনুভূমিক থাকে। তাই দুধ খাওয়ানোর সময় কখনও কখনও কানে চলে যেতে পারে। তখন কানে ঘা হয়। বেশি কটন বাড ব্যবহারের ফলেও কান ছিদ্র হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রতিদিন কানপাকা রোগী আসেন বহির্বিভাগে। এরমধ্যে বয়স্ক ও শিশু রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রোগীই আসেন পর্দা ছিদ্র হওয়ার পর। আর এমনটা হয় কানপাকা থেকে। কানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে থাকে এসব রোগীদের। এরসঙ্গে কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন রোগীরা।

কানপাকা প্রতিরোধে কটনবার দিয়ে কান না চুলকানো, ঠাণ্ডা ও সর্দির সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি জানিয়ে ডা. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘রাস্তাঘাটে অনেকে টাকা দিয়ে কান পরিষ্কার করান। এতে অনেক সময় কানের মধ্য থেকে হাড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব হাতুড়েদের কাছে যাওয়া যাবে না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm