চট্টগ্রামে দুবাইফেরত দুই যাত্রীর ব্যাগে মিললো নিষিদ্ধ ‘গৌরী ক্রিম’

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে আবারও ধরা খেয়েছে আমদানি নিষিদ্ধ পাকিস্তানের তৈরি ‘গৌরি ক্রিম’। এসব পণ্য দুবাইফেরত দুই যাত্রীর ব্যাগ থেকে পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা ক্রিমের সংখ্যা ২৫০ পিস।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে দুবাই থেকে আসা দুই যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করে এ পণ্য জব্দ করে কাস্টমস, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স।

জানা গেছে, বাংলাদেশে চালু থাকা আটটি রং ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ক্ষতিকর মাত্রায় পারদ (মার্কারি) এবং পারদ ও হাইড্রোকুইনোন পাওয়া যায়। এই আটটি ক্রিমের মধ্য ‘গৌরি ক্রিম’ অন্যতম। এজন্য এই আট ধরনের ক্রিম আমদানি নিষিদ্ধ করেছে মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)।

সূত্রে জানা গেছে, বাজারের বিভিন্ন ব্রান্ডের রং ফর্সাকারী ১৩টি ক্রিম বিএসটিআই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে গৌরিসহ ৮টি ক্রিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ছয়টি পণ্যের মধ্যে বিপজ্জনক মাত্রায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির পারদ (মার্কারি) আর দুটি পণ্যের মধ্যে পারদ (মার্কারি) ও হাইড্রোকুইনোন পাওয়া গেছে। এগুলো ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগসহ জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

বিএসটিআই যেসব রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ করেছে সেগুলো হলো—গোরি কসমেটিকস লিমিটেডের গৌরি, এস জে এন্টারপ্রাইজের চাঁদনী, কিউসি ইন্টারন্যাশনালের নিউ ফেস, ক্রিয়েটিভ কসমেটিকস (প্রা.) লিমিটেডের ডিউ, গোল্ডেন পার্ল কসমেটিকসের গোল্ডেন পার্ল, পুনিয়া ব্রাদার্সের ফাইজা, নুর গোল্ড কসমেটিকসের নুর,হোয়াইট পার্ল কসমেটিকসের হোয়াইট পার্ল প্লাস।

জানা গেছে, গৌরি ক্রিম বিক্রির অনুমোদন না থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে আমদানি করে বিক্রি করছে এসব রং ফর্সাকারী দ্রব্য। মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ছাড়াও ফেসবুক পেজ থেকে এই ক্রিম বিক্রি করা হয়।

বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানের গৌরি কসমেটিকসের গৌরি ব্র্যান্ডের স্কিন ক্রিমে পারদের মাত্রা ৭৫৫.৮৫ পিপিএম; এস জে এন্টারপ্রাইজের চাঁদানী ব্র্যান্ডের ক্রিমে ৬২৯.৯৬ পিপিএম; কিউ সি ইন্টারন্যাশনালের নিউ ফেস ক্রিমে ৫৯০.৩৮ পিপিএম; ক্রিয়েটিভ কসমেটিকসের ডিউ ক্রিমে ২৮৫.৮৮ পিপিএম; গোল্ডেন পার্ল কসমেটিক্সের গোল্ডেন পার্ল ক্রিমে ৬৫৪.১৩ পিপিএম; পুনিয়া ব্রাদার্সের ফাইজা ক্রিমে ৫৯০.৪৫ পিপিএম; নূর গোল্ড কসমেটিকসের নূর ক্রিমে পারদ ১৯৩.৬৮ পিপিএম ও হাইড্রোকুইনোনের মাত্রা ১৯৮০.৬৮ পিপিএম; হোয়াইট পার্ল কসমেটিকসের হোয়াইট পার্ল প্লাস ব্র্যান্ডের স্কিন ক্রিমে পারদ ৯৪৮.৯৩ পিপিএম ও হাইড্রোকুইনোন ৪৩৪.৭৩ পিপিএম মাত্রায় পাওয়া গেছে।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ এ ধরনের ক্রিম। রং ফর্সাকারী এসব ক্রিম ব্যবহারে চর্ম রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এই ক্রিমের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এগুলো ব্যবহারে অনেকের শরীরে এলার্জি হয়, লাল দানা ওঠে, চুলকায় এবং ফুলে যায়। অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে ক্ষত তৈরি করে।

এদিকে শনিবার গৌরি ক্রিম ছাড়াও বিপুল পরিমাণের সিগারেট জব্দ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইএ ১৪৮’র দুইজন যাত্রী মো. ফখরুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুল ইসলামের ব্যাগ তল্লাশি করে ১৯৯ কার্টন মন্ড সিগারেট ও আমদানি নিষিদ্ধ ২৫০ পিস গৌরী ক্রিম পাওয়া যায়। জব্দ করা এসব সিগারেটের ডিএম মূল্য বাবদ ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি আরও জানান, জব্দ করা সিগারেট ও ক্রিমগুলো চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের হেফাজতে রাখা হয়েছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে এসব পণ্য আনা হচ্ছিল। তবে আটক করা যাত্রীদের বিমানবন্দর কাস্টমস শাখা কর্তৃক মৌখিকভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর দুবাই থেকে আসা এক যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশির সময় প্রথমবার বেশি পরিমাণে নিষিদ্ধ ‘গৌরি ক্রিম’ জব্দ করে কাস্টমস ও এনএসআই। এরপর ২০ জুলাই ২০২৫ একই ধরনের আরেক অভিযানে দুবাইফেরত দুই যাত্রীর লাগেজ থেকে ক্রিমের আরও একটি চালান উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া ৮ নভেম্বর ২০২৫ সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিমানবন্দরে যৌথ অভিযান চালায় এনএসআই ও শুল্ক গোয়েন্দা। সে সময় দুই যাত্রীকে আটক করা হয় এবং তাদের কাছ থেকেও নিষিদ্ধ গৌরি ক্রিম পাওয়া যায়।

আইএমই/এএইচ/ডিজে

ksrm