চট্টগ্রাম পুড়ছে তীব্র গরমে, লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাত

হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, শিশু-বৃদ্ধরাই বেশি বিপদে

চট্টগ্রামে তীব্র তাপদাহে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপদে। এই যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। দিনে কিছু সহ্য করা গেলেও রাতের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাধারণ মানুষের একেবারে হাঁসফাঁস অবস্থা। ফলে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বয়স্ক লোকজন। হিটস্ট্রোকের শিকার হচ্ছে মানুষ। ডিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে।

চট্টগ্রাম পুড়ছে তীব্র গরমে, লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাত 1

তবে এমন অসহ্য যন্ত্রণার মাঝে আশার বাণী শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, সোমবার হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় আকাশে মেঘ তৈরি হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে না ভালোভাবে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে তাপমাত্রা কিছু কমতে পারে।

রোববার (১১ মে) চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮২-৮৪ শতাংশ, যা স্বাভাবিক থাকে ৬০-৭০ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সোমবার চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তবে চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি ঝরবে কয়েকটি অঞ্চলে।

তিনি বলেন, বাতাসে যেখানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬০-৭০ শতাংশ থাকার কথা, সেখানে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮২ থেকে ৮৪ শতাংশ। আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় মেঘ তৈরি হতে পারছে না। মেঘ তৈরি হলেই বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে। আকাশে আজ মেঘের উপস্থিতি রয়েছে। সেখান থেকেই পূর্বাভাস মিলেছে বৃষ্টির বার্তা।

আরেক যন্ত্রণা লোডশেডিং

একদিকে তাপদাহে চট্টগ্রামের জনজীবনের ত্রাহি অবস্থা। এর মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে নগরবাসী এক অসহনীয় জীবন কাটাচ্ছে। তীব্র গরমে খেটে থাওয়া মানুষরা পড়েছেন বিপদে।

বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে গরমে কাহিল হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় দিনে ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। বিদ্যুৎ গিয়ে আসছে ১ ঘণ্টারও পরে। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ গিয়ে এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসছে। তবে এটিকে লোডশেডিং বলছে না চট্টগ্রাম পিডিবি।

চট্টগ্রাম পিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন বলেন, রোববার (১১ মে) চট্টগ্রামে কোথাও লোডশেডিং করা হয়নি। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না, সেখানে লাইনের কাজ কিংবা ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা রুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাকলিয়ায় দিনে ৫ থেকে ৬ বারের বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। একবারে গেলে এক ঘণ্টার বেশি সময় পরে আসছে। গভীর রাতে গেলে তো কথাই নেই। শনিবার গভীর রাতেই বিদ্যুৎ গিয়ে এসেছে এক থেকে দেড় ঘন্টা পর। বাসার বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট বাচ্চারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে ঘরে অসুস্থততার হারও বাড়ছে।’

মেডিকেলে বাড়ছে রোগী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন, শিশু, হৃদরোগ বিভাগে রোগীর ভিড় বাড়ছে। হাসপাতালের ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর মেডিসিন রোগীর চাপে বারান্দায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের। হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন স্বাভাবিকেতর চেয়ে বেশি। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সরাসরি রোদে না যাওয়া, হালকা ও সুতির কাপড় পরিধান করা এবং শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১৬ নম্বর মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল আহাদ বিন ইদ্রিস বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে ওয়ার্ডে তাপজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত সপ্তাহে দুজন ডে-লেবার শ্রমিক হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে গরমে ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্ট রোগীর বেশি ভর্তি হচ্ছে ওয়ার্ডে। রয়েছে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীও।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm