চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়লো ৪১ শতাংশ

‘একই পণ্যে দুইবার বাড়তি মাশুল, যা যৌক্তিক নয়’

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির তোয়াক্কা না করে ৩৯ বছর পর মাশুল বাড়লো চট্টগ্রাম বন্দর। এক লাফে বেড়েছে ৪১ শতাংশ মাশুল। এর ফলে সরাসরি ভোক্তার উপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবহারকারীরা।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে এই নতুন মাশুল কার্যকর হয়।

প্রজ্ঞাপন উল্লেখ করা হয়, গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হলেও সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ। এখন থেকে কন্টেইনারপ্রতি (২০ ফুট লম্বা) বাড়তি মাশুল দিতে হবে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। বন্দরের সেবা নেওয়ার জন্য গড়ে ৩৭ শতাংশ মাশুল বাড়তি দিতে হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কন্টেইনার (২০ ফুট লম্বা) থেকে গড়ে মাশুল আদায় করে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় এখন কন্টেইনারপ্রতি বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। তাতে সব মিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি গড়ে মাশুল দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা।

বন্দরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী নতুন মাশুল হিসাব করা হয়েছে। এতে ডলারপ্রতি বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ডলারের হার বাড়লে মাশুলও বাড়বে, কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলার ভিত্তিতে মাশুল আদায় করে।

আমদানি কন্টেইনারে মাশুল বাড়ছে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেইনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা।

কন্টেইনার ওঠানো-নামানোর মাশুলও ব্যাপক হারে বেড়েছে। আগে প্রতি কন্টেইনারে এ খাতে মাশুল ছিল ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার, এখন তা বাড়িয়ে ৬৮ ডলার করা হয়েছে। অর্থাৎ বাড়তি ২৪ দশমিক ৬০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার।

প্রতি কেজি কন্টেইনার পণ্যে আগে গড়ে ১ টাকা ২৮ পয়সা মাশুল দিতে হতো। এখন থেকে প্রতি কেজিতে গড়ে ৪৭ পয়সা বেশি দিতে হবে।

সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৯ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। ফলে মাশুল বৃদ্ধির প্রভাব শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পণ্য রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি পড়বে।

বন্দর থেকে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ খুব কম সুবিধা নিয়ে থাকে। মূলত এসব জাহাজ সাগরে নোঙর করে ছোট জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে। বন্দরের হিসাবে, সব ধরনের পণ্যে গড়ে কেজিপ্রতি মাশুল ৩৫ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ বৃদ্ধি গড়ে ৪১ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এবং বিজিএমইএ পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব জানান, ‘বর্ধিত মাশুলের কারণে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, কাঁচামাল আমদানির সময় এক দফা, আবার রপ্তানির সময় আরেক দফা মাশুল দিতে হবে। ফলে একই পণ্যে দুইবার বাড়তি মাশুল গুণতে হবে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সচিব মো. ওমর ফারুক মাশুল বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ সিদ্ধান্তে নিত্যপণ্যের দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকরা বর্তমানে প্রতি কেজি পণ্যের জন্য ৩২ পয়সা মাশুল দেন। নতুন হারে এটি হবে সর্বোচ্চ ৪৪ পয়সা- অর্থাৎ ১২ পয়সা বেড়েছে। তাই আমরা মনে করি, এতে নিত্যপণ্যের দাম বা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি খুব বেশি বাড়বে না।’

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে। নতুন হার কার্যকর হলেও তা এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম।

এএএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm