এস আলমের টাকায় হাসিনাকে ফেরানোর মিশনে ইউরোপীয় কানেকশন, মার্কিন ‘গোয়েন্দা নথি’র তথ্য
২৫ কোটির চুক্তি, ২৫০ কোটি সাকসেস ফি
২৭ আগস্ট ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে শিল্পগ্রুপ এস আলম। ফখরুলের ভাষায়, এই টাকা এসেছে সেই শক্তির কাছ থেকে যারা বাংলাদেশে নির্বাচন ঠেকাতে চায়।

তিনি একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বরাত দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি হিসাব বা প্রকাশ্য নথিতে এমন অর্থ লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি।

অভিযোগে ঘিরে থাকা এস আলম গ্রুপ দেশের অন্যতম বিতর্কিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তাদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার, ঋণ কেলেঙ্কারি আর চুক্তি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তবে এবারই প্রথম সরাসরি নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগে তাদের নাম আসলো।

ঘটনায় আরও নতুন মাত্রা যোগ করেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। দীর্ঘ ১৯ বছর পর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে এস আলমের একটি বৈঠক হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন বানচাল করা। এটা উদ্বেগের। এ বিষয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
নির্বাচন প্রভাবিত করার বিষয়টি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে। তবে তারা এও স্পষ্ট করেছে, অভিযোগ গুরুতর হলেও এস আলম টাকা দিয়েছে— এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলা আউটলুক’। লন্ডনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ওই প্রতিবেদনে লবিং চুক্তি, আর্থিক লেনদেন এবং আন্তর্জাতিক সংযোগের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
গোপন লবিংয়ে মাস্কাট-ফেনেক, পুরনো সূত্রে সালমান রহমান
দাবি করা মার্কিন গোয়েন্দা নথিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোর পরিকল্পনায় ইউরোপের কয়েকজন বিতর্কিত রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। এতে মাল্টার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কাটের নাম ওঠে এসেছে, যিনি দুর্নীতি অভিযোগে পদত্যাগ করেছিলেন। নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে ইয়োরগেন ফেনেকের কথা, যিনি মাস্কাট সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং বর্তমানে সাংবাদিক ড্যাফনে কারুয়ানা গালিজিয়ার হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। এ দুজনের সঙ্গেই হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অতীত যোগাযোগের তথ্য গোয়েন্দারা নথিভুক্ত করেছেন। তাদের সঙ্গে বলকান অঞ্চলের বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মধ্যস্থতাকারী দামির ফাজলিচের নামও যুক্ত আছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অফশোর নেটওয়ার্ক ও অস্বচ্ছ আর্থিক চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে পরিচিত। নথিতে দাবি করা হয়েছে, এ যোগাযোগগুলোই সাম্প্রতিক সময়ে গোপন লবিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাল্টা–দুবাই–লন্ডনে বৈঠক, ইউনুসকে ঘিরে ‘ইরানি অর্থের গল্প’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থার গোয়েন্দা নথিতে বিস্ময়কর দাবি উঠেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক কর্মকর্তাদের একটি অংশ গোপন লবিংয়ে নেমেছে। চলছে গোপন বৈঠক, অর্থ লেনদেন, চুক্তি আর প্রতিশ্রুতির খেলা, যার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করা।
দাবি করা ওই নথিতে বলা হয়, এই লবিং পরিচালিত হচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, শেখ হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাসিনার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা, তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘ইসলামপন্থী মৌলবাদী’ হিসেবে তুলে ধরা এবং এমনকি সরকার উৎখাতের ভিত্তি তৈরি করা।
গোয়েন্দা নথিতে নাম উঠে এসেছে ইউরোপীয় দেশ মাল্টার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কাট ও ব্রিটিশ-বসনিয়ান ‘ফিক্সার’ দামির ফাজলিচের। বলা হয়েছে, মাল্টা, দুবাই ও লন্ডনে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা, হাসিনার দূত এবং মার্কিন রাজনীতি ও আইনি অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
তারা শুধু হাসিনাকে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের লবিং নয়, বরং ‘প্রমাণ’ তৈরি করার চেষ্টা করছে— এমন তথ্য তুলে ধরে গোয়েন্দা নথিতে বলা হয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ইরান সরকারের আর্থিক যোগসাজশের গল্প দাঁড় করাতে চাইছে। এর উদ্দেশ্য ইউনুসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করা এবং অভ্যুত্থানের কূটনৈতিক ভূমি তৈরি করা।
স্বাধীনভাবে এসব দাবি যাচাই করা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সংস্থার এক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নথিতে ‘লবিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা জোসেফ মাস্কাট ও দামির ফাজলিচের বিরুদ্ধে আর্থিক কারসাজিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
হাসিনা ঘনিষ্ঠদের স্বার্থরক্ষায় ইউরোপের কলঙ্কিত নেতা
মাল্টার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কাট একসময় ইউরোপীয় রাজনীতিতে আলোচিত নাম হলেও এখন তিনি কলঙ্কিত এক চরিত্র। ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা মাস্কাট সাংবাদিক ড্যাফনি কারুয়ানা গালিজিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর পদত্যাগে বাধ্য হন। মাস্কাট প্রশাসনের দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করতে গিয়ে ২০১৭ সালে গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন ড্যাফনি।
২০২৪ সালের মে মাসে মাস্কাট ও তার কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ঘুষ, অর্থপাচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এই ঘটনায় পুরো মাল্টার রাজনীতি কেঁপে ওঠে এবং মাস্কাটকে ইউরোপের সবচেয়ে কলঙ্কিত নেতাদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইয়োরগেন ফেনেক, যিনি সাংবাদিক ড্যাফনি হত্যারও আসামি, ২০১৫ সালেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করেন। মাল্টার অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম দ্য শিফট তখন জানায়, ফেনেক নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কনসালটেন্সি ফার্ম রয়্যাল হ্যাসকোনিং ডিএইচভিকে ২ লাখ ৯৩ হাজার ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা) পরিশোধে সহায়তা করেছিলেন। ফেনেক ও সালমান রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো যৌথভাবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এলপিজি টার্মিনাল ও মাল্টার মডেলে এলএনজি প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। এজন্য তারা রয়্যাল হ্যাসকোনিং ডিএইচভিকে নিয়োগ দেয়।
লিক হওয়া ইমেইলে ওঠে আসে, ঢাকা ও দুবাইয়ে একাধিক বৈঠকে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো কর্মকর্তারা এবং রয়্যাল হ্যাসকোনিং ডিএইচভির দুবাইভিত্তিক কনসালটেন্টরা এলএনজি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফেনেকের দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হঠাৎ অর্থ যোগান বন্ধ করে দেয়। প্রকল্পটিও শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়। পেট্রোবাংলা ভাসমান এলএনজি থেকে সরে স্থলভিত্তিক সমাধান নেওয়ায় পরিকল্পনাটি চূড়ান্তভাবে ভেস্তে যায়।
দ্য শিফটের সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের ছয় মাস পর সালমান এফ রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ফেনেকের সঙ্গে তার পরিচয় খুবই সীমিত ছিল এবং তিনি কেবল মাল্টার প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলেন।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফরাসি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে মাল্টার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কাট শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠমহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং বর্তমানে তাদের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
মাল্টার আদালতে সালমান রহমানের চ্যাট হিস্ট্রি
২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মাল্টা টাইমস–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাল্টার আলোচিত ব্যবসায়ী ইয়োরগেন ফেনেক আদালতে উপস্থাপিত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে দাবি করেন, মাল্টার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ‘যোগাযোগ’ রয়েছে। এই কথাটি তিনি জানান ওই সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফেনেকের সঙ্গে সালমান রহমানের চ্যাটে বাংলাদেশে সম্ভাব্য কয়েকটি প্রকল্প, বিশেষ করে একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সময় ফেনেক মাল্টার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি সাবেক পিএন মিডিয়া প্রধান পিয়েরে পোর্টেল্লিরর সঙ্গে এক চ্যাটে সালমান রহমানের নাম ফের ওঠে আসে। সেখানে ফেনেক সালমান রহমানকে নিজের ‘পার্টনার’ বলে উল্লেখ করেন এবং পরদিন ঢাকায় যাওয়ার কথাও জানান।
বিতর্কে ভরা দামির ফাজলিচ, বলকান থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত নেটওয়ার্ক
দামির ফাজলিচ নামটা অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও তার পুরো ক্যারিয়ারই বিতর্কে ভরা। দীর্ঘদিন ধরে বলকান ও তার বাইরে রাজনীতি, জ্বালানি ও মিডিয়ার অন্ধকারজগতে সক্রিয় তিনি।
ওয়াশিংটনেও শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে তার। তিনি জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের বোর্ড সদস্য, রিপাবলিকান পার্টির তহবিল সংগ্রহে প্রভাবশালী দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তার স্ত্রী অ্যামরা ফাজলিচ মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
বছরের পর বছর দামির ফাজলিচের বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, তেল খাতে অস্বচ্ছ চুক্তি, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির অভিযোগ। বসনিয়া ও আলবেনিয়ার প্রসিকিউটররা একাধিকবার তদন্ত চালালেও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে শেষপর্যন্ত অভিযোগ গঠন হয়নি।
আলবেনিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘বলকান ইনসাইট’ জানায়, উপকূলীয় অঞ্চল দুরেস শহরের পোর্তো রোমানো এলাকায় জমি কেনাবেচায় ফাজলিচের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বড় প্রশ্ন আছে। এসবকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সালি বেরিশার ঘনিষ্ঠ মহলের জন্য দেওয়া ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে দেখা হয়। ব্যাপক দুর্নীতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সালি বেরিশার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যা এখনও বহাল রয়েছে।
বাংলাদেশে দামির ফাজলিচের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। তবে সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কে (এসএসআরএন) প্রকাশিত একটি গবেষণায় ওঠে আসে, ফাজলিচ ছিলেন কুখ্যাত অপরাধী জিউসেপে সিমোনেলির ঘনিষ্ঠ। ২০১০ সালে ইতালির ‘অপারেশন দ্যু টোরে’ অভিযানে আলবেনিয়া থেকে সিমোনেলি গ্রেপ্তার হন। একই অভিযানে ইতালি, স্পেন ও অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও একজনকে আটক করা হয়েছিল।
নথিতে এস আলমের নাম, ২৫ কোটির চুক্তি, ২৫০ কোটি সাকসেস ফি
গোয়েন্দা নথি বলছে, হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোর লবিং এখন নগদ লেনদেনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নথি অনুযায়ী, এক বছরের জন্য স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির মূল্য ২০ লাখ ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে সফল হলে দেওয়া হবে ২ কোটি ডলারের (প্রায় ২৫০ কোটি টাকা) ‘সাকসেস ফি’।
ওই নথি জানায়, ইতিমধ্যেই ৬ লাখ ডলার (৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা) অগ্রিম পেমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপের একাধিক অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুক্তির এক শর্ত হিসেবে বিদেশি মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আটকে থাকা সম্পদ মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে লাভজনক ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার কথাও আছে।
গোয়েন্দা নথিতে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের নামও উঠে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর যোগসাজশে শেখ হাসিনার সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা) পাচারের সঙ্গে জড়িত। নথিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে—‘ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত এই ধরনের তৎপরতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি। এদের জন্য ব্যবসার সুযোগ তৈরি করলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে, বাজারের স্বচ্ছতা নষ্ট হবে এবং নাগরিক অশান্তিকে উসকে দেবে।’
নথিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যদি এই চক্রকে ব্যবসায়িক সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে এর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিপি