চট্টগ্রামের ডকইয়ার্ডে রাতভর ‘বালির বিস্ফোরণ’, বিষবাতাসে শত শত মানুষ শ্বাসকষ্টে

রাতে ঘর ছেড়ে শত শত মানুষের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামে স্যান্ড ব্লাস্টিং বা বালির বিস্ফোরণ চালিয়ে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে প্রান্তিক গ্রুপের একটি ডকইয়ার্ড।

প্রান্তিক ডকইয়ার্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এক মিনিটও কথা বলতে পারব না।’
প্রান্তিক ডকইয়ার্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এক মিনিটও কথা বলতে পারব না।’

রাতভর চলা এই কার্যক্রমে বাতাস ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শত শত শিশু ও বৃদ্ধরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযোগের পরও প্রশাসন কার্যত নীরব। পরিবেশ অধিদপ্তর স্পট ঘুরে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ধুলো-বালি ও শব্দদূষণে অতিষ্ঠ শতাধিক মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ডকইয়ার্ডের পাশে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এর আগে গত ৮ আগস্ট এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সরকারি খাস জমি ও জনগণের চলাচলের রাস্তা দখল করে প্রান্তিক কোম্পানি অবৈধভাবে ডকইয়ার্ড গড়ে তুলেছে। এমনকি ভারী যানবাহনের চাপের কারণে দুর্ঘটনায় অতীতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এখন তারা জাহাজের রং-জং তোলার জন্য স্যান্ড ব্লাস্টিং মেশিন চালাচ্ছে, যা থেকে ধুলো-বালি ও বিষাক্ত কণা ছড়িয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা ধরে চলা স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ে আশপাশের ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধুলোয় সাদা হয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাস্ক পরেও সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষাক্ত বাতাস শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক সুমন বলেন, ‘কোম্পানিকে বারবার বললেও তারা নিয়ম মানছে না।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ফয়সাল জানিয়েছেন, ‘নিয়ম ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘নির্দেশনা উপেক্ষা করেই রাতভর কাজ চলছে।’

এ বিষয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, ‘ইউএনও অফিসে একবার বৈঠক হয়েছে, আবারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি শিগগিরই সমাধান আসবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং তাদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অফিসিয়াল প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন তারা কাজ চালাচ্ছে, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রান্তিক ডকইয়ার্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. গোলাম সরওয়ার সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এক মিনিটও কথা বলতে পারব না।’ এরপরই তিনি ফোন কেটে দেন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এভাবে স্যান্ড ব্লাস্টিং চলতে দেওয়া ভয়ংকর পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করছে। অথচ প্রশাসনের উদাসীনতায় ডকইয়ার্ড মালিকরা দায়মুক্ত থেকে যাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়রা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তারা উচ্চ আদালতে রিট করবেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm