s alam cement
আক্রান্ত
১০২২৪৫
সুস্থ
৮৬৮৫৬
মৃত্যু
১৩২৫

বিপন্ন এশীয় হাতি বৃহত্তর চট্টগ্রামে নির্মমতার শিকার, ৭ দিনে ৪ হাতির বিস্ময়কর মৃত্যু

১৭ বছরে খুনের শিকার ১১৮ হাতি

0

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর পর শনিবার কক্সবাজারের চকরিয়ায় আবার পাওয়া গেল হাতির মরদেহ। এ নিয়ে বাংলাদেশে গত সাত দিনে পাঁচটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এর চারটি ঘটনাই ঘটেছে বৃহত্তর চট্টগ্রামে। হাতির এমন একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরাও বিস্মিত হয়ে পড়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, এশীয় প্রজাতির এই হাতিকে বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইউসিএন ‘মহা-বিপন্নের তালিকায়’ অন্তর্ভূক্ত করলেও প্রাণীকে রক্ষায় প্রশাসনের সামান্য নজরদারিও নেই। গত সাত দিনে পাঁচটি হাতি মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র একজন।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, হাতি মৃত্যু নিয়ে বনবিভাগ যে তথ্য দেয়, বাস্তবে মৃত্যুর সেই সংখ্যা দ্বিগুণ।

বাংলাদেশ বন বিভাগ ও প্রকৃতি-প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা—আইইউসিএনের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশে এশিয়ান বন্য হাতি ছিল ২৬৮টি। আর সরকারি অনুমতিক্রমে দেশে পালিত হাতি ছিল ১০০টি। কিন্তু একের পর এক হাতি মৃত্যুর ঘটনায় এই সংখ্যা দ্রুতই কমছে।

বিপন্ন এশীয় হাতি বৃহত্তর চট্টগ্রামে নির্মমতার শিকার, ৭ দিনে ৪ হাতির বিস্ময়কর মৃত্যু 1

একের পর এক কেন হাতি মারা যাচ্ছে

হাতির প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনাতেই বনবিভাগ ও স্থানীয় লোকজন বলে থাকে, লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতি লোকালয়ে আসছে না বরং হাতির আবাসভূমিতে মানুষ ঢুকে পড়ে হাতির জায়গা দখল করছে। হাতিরা বংশ পরম্পরায় হাজার হাজার বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট রুট ধরেই চলাচল করে। সম্প্রতি আইইউসিএন হাতির সেই সেই বিচরণক্ষেত্র সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে।

তারা বলছেন, হাতি তার বিচরণ-ক্ষেত্রে কিছু পেলেই সেটা লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সেখান থেকেই হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আর এভাবে এতোগুলো হাতি প্রাণ হারিয়েছে। কোথাও বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে মারছে, কোথাও তো গুলি করেও মারা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের বনাঞ্চলের হাতিগুলো সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। রোহিঙ্গারা যেখানে বসতি করেছে সেটা পুরোটাই হাতির বিচরণক্ষেত্র। কিন্তু গত এক দশকে বন বিভাগের বহু জমি মানুষের দখলে চলে যাওয়ায় হাতির এই বিচরণক্ষেত্র হাতির জন্য আর নিরাপদ নেই।

বিপন্ন এশীয় হাতি বৃহত্তর চট্টগ্রামে নির্মমতার শিকার, ৭ দিনে ৪ হাতির বিস্ময়কর মৃত্যু 2

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতি মিয়ানমার থেকে এই রুটেই টেকনাফ বনে যায়। সেই রাস্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প হওয়ায় হাতিগুলো একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আর যেগুলো পারাপারের চেষ্টা করেছে সেগুলো মানুষের হামলার মারা গিয়েছে।

অনেকে হাতি ঠেকাতে ক্ষেতের চারপাশে বিদ্যুতের জিআই তারের বেড়া দিয়ে সবজি ও ধান চাষ করছে। ফলে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতিগুলো মারা যাচ্ছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে জিআই তারের বেড়া তুলে নেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও তারা তা শুনছে না।

একের পর এক হাতি খুন

হাতির পাল দিনের বেলা উঁচু ভূমিতে থাকে এবং সন্ধ্যার পর সমতলের দিকে নেমে এসে চুপিসারে বিচরণ করে। তারপর আবার পাহাড়ে উঠে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ এই হাতিদের উত্তেজিত করে তোলে বলে অভিযোগ বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতির মৃত্যু নিয়ে বনবিভাগ যে তথ্য দেয়, বাস্তবে মৃত্যুর সেই সংখ্যা দ্বিগুণ।

বিপন্ন এশীয় হাতি বৃহত্তর চট্টগ্রামে নির্মমতার শিকার, ৭ দিনে ৪ হাতির বিস্ময়কর মৃত্যু 3

উল্লেখ্য, হাতি মৃত্যুর সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৩ নভেম্বর) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ছড়াখোলা এলাকার একটি গর্ত থেকে মৃত হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে হাতিটিকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকজন ও বনকর্মীরা জানান, গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ছড়াখোলা এলাকায় একটি হাতির পাল ধান খেতে আসে। এ সময় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা যায় একটি হাতি। পরে ধানখেতের মালিকরা গোপনে হাতিটিকে গর্ত করে মাটিতে পুতে দেয়। শনিবার (১৩ নভেম্বর) ওই হাতিটির শরীরের একটি অংশ ভেসে উঠে। পরে স্থানীয় লোকজন হারবাং বনবিভাগকে কর্মকর্তাদের খবর দেন।

এর আগের দিন শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ভোর রাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একটি ধান ক্ষেতের পাশে একটি হাতিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় বন কর্মকর্তারা জানান, ধান ক্ষেতের পাশে চারিদিকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে হাতিটি মারা গিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য অভিযোগকারী বলেন, বাঁশখালীর চাম্বল পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করে কয়েক হাজার অবৈধ ঘর-বাড়ি গড়ে উঠেছে। এসব বনাঞ্চল কতিপয় বনদস্যুরা নিজেদের জায়গার মত করে স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনয়িনরে পূর্ণগ্রাম বনবটি এলাকার হাইথারাঘোনা গ্রামে একটি হাতিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হাতির বয়স আনুমানিক ১২-১৫ বছর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের লোকজন বনে শুকর শিকার করতে গেলে বণ্যহাতির পাল সামনে চলে আসে। তখন তারা হাতির পালের দিকে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি হাতি মাথায় গুলি খেয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।

এ ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও আটক করা হয়েছে একজনকে। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার অপর আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হাতি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে মঙ্গলবার শেরপুরের শ্রীবরদীতে বালিজুড়ী সীমান্তে একটি মৃত বুনো হাতি উদ্ধার করেন বন কর্মকর্তারা। ওই হাতিটিও ক্ষেতের চারপাশে দেয়া বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একইভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায় আরেকটি হাতি। উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাইরতলী গ্রামের মইত্তাতলী পাহাড়ি এলাকার একটি ধানখেত থেকে মৃত হাতিটি উদ্ধার করা হয়। হাতিটির শুঁড় দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। হাতিটির ময়নাতদন্ত হলেও এখনও কোন মামলা হয়নি।

হাতি হত্যার শাস্তি কী?

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি হাতি হত্যা করেছে বলে প্রমাণিত হলে তিনি জামিন পাবেন না এবং অপরাধীকে সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ দশ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই অপরাধ পুনরায় করলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেয়ার বিধান আছে।

তবে কেউ যদি হাতির হামলার শিকার হন এবং তার প্রাণ যাওয়ার শঙ্কা থাকে তাহলে জীবন রক্ষার্থে হাতি হত্যার এই বিধান প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও আইনে অভয়ারণ্যে, গাছ কাটা, গাছ সংগ্রহ, বন ধ্বংস এমনকি বনভূমির অংশে চাষাবাদ করাও নিষেধ করা হয়েছে।

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm