ব্রিজের কাজ ফেলে পালিয়েছে ঠিকাদার, দুর্ভোগে ২০ গ্রামের মানুষ

কক্সবাজার সদরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মাণাধীন ‘বহুবিধ রোহিঙ্গা সঙ্কটে জরুরী সহায়তা প্রকল্প’র (ইএমসিআরপি)আওতাধীন একটি ব্রিজের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে পালিয়েছে ঠিকাদার। খুরুশকুল ও পিএমখালী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কুমারের ছড়ার ওপর নির্মিতব্য ব্রিজটির কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দুই ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ।

জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়ন ও খুরুশকুল ইউপির কুলিয়াপাড়া হয়ে মাঝেরঘাট ব্রিজ সংযোগস্থল কুমারের ছড়া খালের ব্রিজটি পুনঃসংস্কারের জন্য পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয় প্রায় দুই বছর আগে। ২০২৩ সালে ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৪ টাকা ব্যয়ে সেখানে নতুন করে এক্স মিলিটারি সড়কে ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজের অনুমোদন হয়। কাজটি পায় ‘এমই-এমইই-হাসনা জেভি’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ব্রিজের সংস্কারকাজ শুরু করে যথা সময়ে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের ১৫ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১বছর আগে নির্মাণকাজটি বন্ধ রেখে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাতারাতি পালিয়ে যায়। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউই ব্রিজটি দেখতেও আসেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, একজন মানুষ মারা গেলে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে হয়। ব্রিজটির জন্য স্থানীয় মানুষকে নানান দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানান, ব্রিজটি খুরুশকুল ও পিএমখালী ইউনিয়নের জন্য খুবই জরুরি। এই ব্রিজ দিয়ে হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিদিন কক্সবাজার টাউনমুখী মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজন এই ব্রিজ। গত দুই বছর আগে ব্রিজটি দিয়ে কম সময়ে, স্বল্প ভাড়ায় স্বাচ্ছন্দ মনে আসা-যাওয়া করে আসছিল মানুষ। কিন্তু গাড়ি চলাচলের বিকল্প সড়ক না করে পুনঃসংস্কারের নামে পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়। প্রায় এক বছর হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে চলে গেছে।

স্থানীয় এক ইউপি সদস্য জানান, মরহুম সৈয়দ নুর হাজী বাড়ির পশ্চিমে কুমারের ছড়ায় ১৮ মিটার গার্ডার ব্রিজের কাজটি খুরুশকুল ও পিএমখালী ইউনিয়নের কানেক্টিং সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত এবং একসঙ্গে টেন্ডার হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরুতেই বিলম্ব করে কাজ শুরু করলেও প্রথমে কাজের কিছুটা অগ্রগতি ছিল। এক কয়েক মাস পর থেকে কাজের গতি কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ না করে টেন্ডার বাতিল করা হবে। ব্রিজটির জন্য মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্পের সুপারভাইজার তোফাজ্জল হোসেনের মুঠোফোনে কলা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ঠিকাদার আকরাম সিকদার।

সদর উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ও কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে প্রকল্প মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে ঠিকাদার। তাছাড়া দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রকল্পটি রি-টেন্ডার হবে কিনা, অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে প্রকল্প বাতিল হতে হবে। প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার সময় পাবেন। দুই মাস নয়, চাইলে ১০ দিনেও কাজ শেষ করা যায়। কাজ না করলে দশ বছরও শেষ করা যাবে না।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm