চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আয়েশা সিদ্দিকাকে অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকালে ত্রাণ প্রশাসন-১ শাখা থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ধারা অনুযায়ী আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই বিধিমালার ১২(১) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তকালীন তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন। আদেশটি জনস্বার্থে জারি করা হয়েছে এবং তা ২২ মে থেকে কার্যকর ধরা হবে।
এই বরখাস্তের পেছনে রয়েছে ১ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোছাম্মৎ ছেনোয়ারা বেগম ও পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমের একটি লিখিত অভিযোগ, যা তারা গত ১৮ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আয়েশা সিদ্দিকা প্রায় পাঁচ মাস আগে রাউজান উপজেলায় যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও অফিসের পরিবেশ বিঘ্নিত করার অভিযোগ উঠতে থাকে।
তিনি নিয়মিত অফিসে নিজের পছন্দের লোকজন নিয়ে সময় কাটান এবং সরকারি প্রকল্পগুলো তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতেন, যাদের প্রকৌশলগত দক্ষতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে স্টিমেট তৈরি ও বাস্তবায়ন কাজ তিনি নিজে না করে অদক্ষ লোকজন দিয়ে করানোর ফলে কাজের গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিল পেতে নিয়মিত উপজেলা প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প ভাগাভাগি ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক মাস আগে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে আয়েশা সিদ্দিকার উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
তখন তার অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় এবং উত্তেজিত জনতা তার ওপর হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত হয়ে তাকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় একটি মামলা চলমান রয়েছে।
এছাড়া তার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও টানাপোড়েন ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ ছাড়াই সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়মিত কাজে বাধা দেওয়াসহ একাধিক অনিয়ম তাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, আয়েশা সিদ্দিকা জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষর নিয়ে তা প্রকল্প কাজে ব্যবহার করার কথা বললেও, পরবর্তীতে তা ইউএনও’র বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি হয়। এমনকি বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন।
জেজে/ডিজে