মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা নেই, বর্ডার আমাদের নিয়ন্ত্রণে, সাতকানিয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মিয়ানমার সীমান্তের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই। বর্ডার সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। মায়ানমার আর্মি ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে আরকান আর্মি কিছু জায়গা দখল করে নিয়েছে। উভয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে।

মঙ্গলবার (৩১ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জতের বিজিবির ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের ১০২ তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

নতুন সৃষ্টি হওয়া প্রতিবেশী আরকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক সময় বন্ধু শত্রু হয়, শত্রু বন্ধু হয়। এ সরকার কোন অবস্থায় কার সঙ্গে কি রকম আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে হত্যার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় সীমান্তে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত পার হয়ে শত্রুতা উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত করে থাকে। ভারত আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আমরাও এর প্রতি উত্তর দিচ্ছি। তবে তাদের (ভারত) মিডিয়াগুলো প্রচুর মিথ্যাচার করছে। এর প্রতি উত্তর কিন্ত আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোও দিচ্ছে। আশা করি আগামীতেও দেশের মিডিয়াগুলো মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার থাকবে। আর বিজিবির সদস্যদের আদেশ দেওয়া আছে, তারা যে কোন অবস্থায় যাতে পিট না দেখাই, সকল সমস্যা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে।

মায়ানমার সীমান্তে ভূ নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, মায়ানমারের নাফ নদী বাংলাদেশের ব্যবহার করতে হয়। তারা বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে সেন্টমার্টিন যেতে বাধা দেন না। তবে বড় বড় জাহাজ যেতে বাধা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা চলছে, আশা করি অচিরেই এর একটা সমাধান আসবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনও পিছপা হয় না, সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, নির্ভরযোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মতৎপরতা, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুনাবলীর প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে এর ৪ মূলনীতি-মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধান অতিথি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ৮১৭জন অকুতোভয়বীর বিশেষ করে দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ , ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৮ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিজিবি সদস্যসহ ছাত্র-জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আইজিপি বাহারুল আলম, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার ছিলেন মেজর কে এইচ ইমরান হাসনাইন। এবারের ব্যাচের সেরা রিক্রুট নির্বাচিত হন মো. নাঈম মন্ডল।

১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই ২০২৪ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।

শেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বাদকদল মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm