দোয়া হলো মুমিনের জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। আল্লাহর নিকট বান্দা যতই ছোট বা বড় সমস্যায় পড়ুক, আন্তরিক বিশ্বাস ও ভক্তি নিয়ে তার চাওয়ার নামই দোয়া। হাদিসে উল্লেখ আছে, আল্লাহ কিছু সময় ও অবস্থায় দোয়া ফিরিয়ে দেন না।
মুমিনের দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আস্থা ও বিশ্বাস, পবিত্রতা, নম্রতা, এবং হালাল উপার্জন। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সূরা মুমিন : আয়াত ৬০)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দোয়া ইবাদত।” মানুষের প্রয়োজনীয় কিছু তিনি অজান্তেই প্রদান করেন, কিন্তু অনেক কিছু যা আল্লাহর কাছ থেকে চাইতে হয়, সেটিই হলো দোয়া।
দোয়া কবুলের নির্দিষ্ট সময়সমূহ ও তাদের গুরুত্ব
১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশ
নবীজি বলেছেন, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ নীচের আসমানে নেমে এসে বলেন:
‘কে আছো? আমাকে ডাকো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে? আমার কাছে চাও, আমি তা পূর্ণ করবো। কে আছে? আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি ক্ষমা করবো।’
২. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়
এই সময় দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ফরজ নামাজের আগে বা ইকামতের পরে অন্তরের গভীর বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
৩. জুমার দিনের নির্দিষ্ট মুহূর্ত
নবীজি বলেছেন, এই সংক্ষিপ্ত সময়ে মুমিন নামাজের অবস্থায় আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তা পূর্ণ হয়।
৪. সিজদার সময়
সিজদা হলো আল্লাহর নিকট পৌঁছানোর সবচেয়ে নিকটতম সময়। সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম।
৫. ফরজ নামাজের পর
ফরজ নামাজের পরে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়।
৬. কদরের রাত (লাইলাতুল কদর)
যারা ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ আদায় করে, তাদের পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হয়।
৭. বৃষ্টির সময়
বৃষ্টি বর্ষণের সময় দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
৮. আরাফাতের দিন
হজের আরাফাতের দিনে দোয়া সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।
৯. জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন
এই দশদিনে দোয়া ও ইবাদত অন্য যে কোনও দিনের তুলনায় উত্তম।
১০. রোজাদারের ইফতারের সময়
ইফতারের সময় দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
১১. জমজমের পানি পান
সঠিক নিয়তে পান করলে তা কবুল হয়।
১২. রাতে ঘুম থেকে ওঠা
রাতের অল্প সময়ে জাগে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
১৩. পবিত্রতা অর্জনের পর
ওয়ূযু বা গোসলের পর দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়।
১৪. বিনয় ও দুহাত তুলে দোয়া করা
হাত আসমানের দিকে তুলে নম্রভাবে প্রার্থনা করা উচিত। নবীজি বলেছেন, আল্লাহ বান্দার এই দোয়াকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন না।
১৫. আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদসহ দোয়া
দোয়া শুরুতে ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ বলা উত্তম। দরুদ পাঠ করে দোয়া শুরু ও শেষ করা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
দোয়া কবুলের তিনটি মূল শর্ত
১. হালাল উপার্জন
হালাল খাদ্য, পোশাক ও আয় ছাড়া দোয়া পূর্ণ হয় না।
২. হতাশ না হওয়া ও ধৈর্যধারণ
দোয়া করলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাড়াহুড়া করলে তা কবুল হয় না।
৩. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা
ভরসা ও আস্থা থাকলেই দোয়া কার্যকর হয়। অমনোযোগী বা অসাড় মন থেকে দোয়া কখনো কবুল হয় না।
দোয়ার আদব ও নীতি
- পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করা।
- বিনয়, নম্রতা ও আন্তরিকতা সহ দুহাত তুলে দোয়া করা।
- দরুদ শরীফসহ দোয়া শুরু ও শেষ করা।
- মিনতি ও ধৈর্যসহ দোয়া করা।
- জিকির ও দোয়া যেমন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ অন্তর্ভুক্ত করা।
এইভাবে মুমিনগণ আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের এসব সময় ও দিনে দোয়া ও ইবাদতের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট