চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনায় দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার দু’জন হলেন—আব্দুল হান্নান (৪১) ও আবু বক্কর (৫৫)। তারা উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শামসুল ইসলামের ছেলে। এদের মধ্যে হান্নান সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নাজির হিসেবে কর্মরত।
রোববার (৩০ জুন) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বাদি হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
আব্দুল হান্নান ও আবু বক্কর ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন—আবু বক্করের ছেলে মুসলিম উদ্দিন হিরু (২৬), তাদের সহোদর মো. হানিফ (৪৫), মো. সোহাগ (৪৩) ও মোহাম্মদ ইকবালসহ (৩৮) এবং ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
হামলার শিকার শিক্ষকের নাম আব্দুর রহমান। আবদুর রহমান বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বুচির পাড়ার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
আব্দুর রহমান মুঠোফোনে জানান, আমার মাথায় ও দু’চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। চোখে আমি ভালোভাবে দেখছি না। পাশাপাশি মাথায়ও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে। আজ সকালে মাথার সিটিস্ক্যান ও চোখের পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাথা ও চোখের সমস্যা গুরুতর। ভাগ্য খারাপ হলে চোখ নষ্ট ও ব্রেনেরও সমস্যা হতে পারে। যারা আমাকে আঘাত করে আমার পরিবারের সদস্যদের এতিম করতে চেয়েছে, তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিন হিরু তার নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে ভাইরাল হওয়া ভিডিও’র ব্যাখা ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, শিক্ষক আবদুর রহমানের ১২ ভাই-বোন। তারা আমাদের নিকট কিছু জায়গা বিক্রি করেছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে আমাদের রেজিস্ট্রি দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষক আবদুর রহমান ওই জায়গায় তার অংশটুকু বিক্রি করেননি। তবে তিনি তার মূল জায়গা থেকে কয়েকগুণ বেশি দখল করে রেখেছেন।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে তাকে ১০ থেকে ১৫ বার বলেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি কানে নেননি। ঘটনার দিন তিনি দোকানে এসেছিলেন। তখন এ বিষয়ে আমার বাবা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি আমার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। আমার বাবা আঘাত পাওয়ার পরে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখি। পরে তার সাথে আমাদের হাতাহাতি হয়।
তবে মারধরের বিষয়টি ফেসবুকে উল্লেখ করেনি তিনি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সাতকানিয়ার ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, জায়গায় বিরোধ থাকলে সেটা আইনগতভাবে অথবা বৈঠক বসে সমাধান করা যেত। তবে একজন শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে খুঁটির সাথে বেঁধে মারধরের মাধ্যমে হেনস্তা করা মোটেই উচিত হয়নি। এ ঘটনা শুধু এ শিক্ষককে আঘাত নয়, পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান ও অসম্মান করার সমতুল্য। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষককের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বাদি থানায় একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় হান্নান ও বক্কর নামে দুই এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আজ সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডিজে