ব্যাংক লুটের টাকা পরিবারে ভাগ, এস আলম পরিবারের ছয়জন মামলায় অভিযুক্ত

৫ দিনেই বেরিয়ে যায় ৫০ কোটি টাকা

ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকা মেরে খাওয়ার অভিযোগে সাইফুল আলম মাসুদের নেতৃত্বাধীন এস আলম চক্রের ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে আছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। তালিকায় আরও রয়েছেন সাইফুল আলম মাসুদের ভাই, ভাইয়ের বউ, বড় মেয়ে, মেয়ের জামাই ও দুই ভাগ্নে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও আসামি হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরীও।

শনিবার (২৯ জুন) দুদকের চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের করা মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রথম মামলায় অভিযোগ আনা হয়, গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই এবং তাদের ব্যবসা ও গোডাউন সরেজমিনে পরিদর্শন না করে এবং কোনো জামানত ছাড়াই ঋণের আবেদন জমা দেওয়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় মামলায়ও অভিযোগ আনা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে একইভাবে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে এই টাকা প্রকৃত উদ্দেশে ব্যবহার না করে গ্রাহকের অন্য ঋণ সমন্বয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে ২৯ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এস আলম পরিবারের ছয়জন

মামলায় আসামি করা হয়েছে সাইফুল আলম মাসুদের ভাই ওসমান গণি, মেয়ে মায়মুনা খানম, মেয়ের জামাই বেলাল আহমেদ, ভাই আবদুস সামাদ লাবুর স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস এবং দুই ভাগ্নে আরিফ আহমেদ ও মোস্তান বিল্লাহ আদিলকে। এরা সকলেই এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) সাবেক পরিচালক।

গত মার্চে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুল আলম মাসুদ ও তার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে ১১ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত, তার মধ্যে বেলাল আহমেদ, মোস্তান বিল্লাহ আদিল ও মায়মুনা খানমের নাম রয়েছে।

পুরনো দাগী সাদ-মুছার মহসিন

মামলার প্রধান দুই আসামির মধ্যে রয়েছেন অভিযুক্ত সাদ-মুছা গ্রুপের মালিক ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসিবি) সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন এবং তার স্ত্রী শামীমা নারগিস চৌধুরী।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৫৬ কোটি টাকার চেক প্রত্যাখ্যান (ডিজঅনার) মামলায় শিল্প গ্রুপ সাদ-মুছা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনকে ৫ বছর কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। গত বছরের ২৪ এপ্রিল মহসিন ও তার স্ত্রী শামীমা নারগিস চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাদ-মুছা গ্রুপের কাছে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা পাবে।

আবার সেই পি কে হালদার

আসামির তালিকায় আছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার এবং সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী। পিকে হালদার বর্তমানে ভারতে অন্তরীণ রয়েছেন। বাংলাদেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। ২০২২ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাটের একটি হোটেল থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার হন।

আসামি আরও যারা

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) সাবেক পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ, ড. মোহাম্মদ ফারুক, আরিফ আহমেদ, সরোয়ার জাহান মালেক, সাজেদা নূর বেগম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক এসএএম সলিমউল্লাহ, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দৌলা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ক্রেডিট ডিভিশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার, সাবেক এসভিপি অ্যান্ড হেড অব ক্রেডিট মোহাম্মদ মাহমুদ আলম, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী মশিউর রহমান জাহেদ, এসএভিপি অ্যান্ড ম্যানেজার মো. শামসুল আলম, এসপিও অ্যান্ড ম্যানেজার অপারেশন মুন্নশ্রী চক্রবতী, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হাসান আলী, জুনিয়র অফিসার রিফাত ইফতেখারুল আলম ও জুনিয়র অফিসার মিজানুর রহমান ও নিগার সুলতানা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm