সিঙ্গাপুরের নাগরিক সেজেও পার পাচ্ছেন না এস আলম, জালে আটকাচ্ছেন হাইকোর্ট

দেশের টাকা লুট করে এখন ‘বিদেশি’

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কেন পদক্ষেপ নেবে না, সেই ব্যাখ্যা চাইতে রুল জারি করা হয়েছে। রুলের জবাব দিতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজীউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইসলামী ব্যাংকের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যাংকের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গত কয়েক বছরে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে এস আলমের বিরুদ্ধে। এরপর তিনি দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হন। ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেন, যাতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়।

আইনজীবী কাইয়ুম জানান, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া মুদ্রাপাচারসংক্রান্ত মামলাগুলোকে জটিল করে তোলে। এমন অবস্থায় ইসলামী ব্যাংক নাগরিকত্ব ত্যাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির নিজেদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন। একই দিনে তারা বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পান।

সিঙ্গাপুরের নাগরিক পরিচয়ে সুরক্ষা দাবি

গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তোলেন এস আলম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী পরিচয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির সুরক্ষা দাবি করেন। তার আইনজীবীরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকিও দেন।

নজিরবিহীন নাগরিকত্ব ত্যাগ ও একই দিনে স্থায়ী বসবাস

ব্যাংকিং খাতে প্রভাব প্রতিষ্ঠার পর এস আলম পরিবার ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে একই দিনে দেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পান। সরকার এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে বলে বিশ্লেষকদের মন্তব্য রয়েছে। সাধারণত নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা পাওয়া জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু সেদিন সচিবালয়ে অতি গোপনে দুটিই সম্পন্ন করা হয়।

নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পরিবারটি জনপ্রতি মাত্র ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ দেখিয়েছে, যদিও ব্যাংকিং খাত থেকে তাদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা বলে উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাগজে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস আলম এমন একটি দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন যেখানে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়। আবার ব্যবসায়িক সুবিধা পেতে তিনি বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক পরিচয় নিয়েছেন। বিদেশিদের বিনিয়োগে যেসব জটিলতা থাকে, তা এড়ানোই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে দুই দেশে ব্যবসা পরিচালনার আড়ালে অর্থপাচারের সুযোগও তৈরি হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশি কেউ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কমপক্ষে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগের শর্তে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ধরনের অনুমোদনে বেপজা, বিডা, বেজার সনদ এবং পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।

স্থায়ী বসবাসের অনুমোদনে উল্লেখ আছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের মতো সব অধিকার ও সুযোগ পাবেন এবং একই ধরনের দায়িত্বও পালন করতে হবে। তবে সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি দাবি করতে পারবেন না। বাংলাদেশে বিনিয়োগকৃত অর্থ বিদেশে নিতে চাইলে অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে।

সিপি

ksrm