৪ মাস চাল পাচ্ছেন না কর্ণফুলীর ৪১৪ নারী, ‘মেয়াদ শেষ’ হওয়ায় দুর্ভোগে দরিদ্ররা

কার্ড পাবেন নতুনরা, পুরাতনরা চার বছর পর

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় গত চার মাস ধরে ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় ৪১৪ জন হতদরিদ্র নারী আর চাল পাচ্ছেন না। প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল পেতেন তারা, যেটা ছিল তাদের ন্যূনতম জীবিকার অন্যতম ভরসা। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে সেই সহায়তা।

প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব উপকারভোগী আগে দুই বছরের জন্য কার্ড পাওয়ার পর নিয়মিত চাল পেতেন। তবে এখন সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় চাল পাওয়া বন্ধ হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পুরাতন উপকারভোগীরা চার বছর পর্যন্ত আর তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। নতুনদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে, যাচাই-বাছাই শেষে তাদেরকেই কার্ড দেওয়া হবে।

জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় অনেক হতদরিদ্র নারী ৫ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে দুই বছরের জন্য ভিডব্লিউবি কার্ড সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের সেই টাকা ইতোমধ্যে সরকারি হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে আগের সুবিধাভোগীরা এখন আর আবেদন করতে পারছেন না।

উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে জানা গেছে, এই চার মাসে চাল না পাওয়ায় হতাশা ও দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারগুলো।

এই কর্মসূচির আওতায় বড়উঠান ইউনিয়নে উপকারভোগী ছিলেন ৮৭ জন দুস্থ মহিলা, জুলধা ইউনিয়নে ৭৫ জন, শিকলবাহা ইউনিয়নে ৮৮ জন, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে ৮২ জন ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ৮২ জন।

চরলক্ষ্যা গ্রামের রোকসানা আক্তার বলেন, ‘সংসারে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোভাবে দিন চলে না। ৩০ কেজি চাল ছিল আমাদের একমাত্র সহায়তা। এখন সেটাও বন্ধ। নতুন তালিকাও হচ্ছে না। শুধু আমরা না, নতুন দরিদ্র নারীরাও পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিবেচনা করা উচিত।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর’ পরিচালিত এই ভিডব্লিউবি কর্মসূচি আগে ‘ভিজিডি’ নামে পরিচিত ছিল। নতুন করে অ্যাপভিত্তিক আবেদন পদ্ধতি চালু হওয়ায় কার্ড পেতে অপেক্ষমাণদের এখন ডিজিটাল সেন্টারে আবেদন করতে হবে। প্রতি কার্ডের মেয়াদ দুই বছর। একবার মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী চার বছর আর তালিকাভুক্ত হওয়া যায় না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলমান চক্রে সারাদেশে মোট উপকারভোগী নারীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজার। তাদের প্রত্যেকে মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা পান। নতুন কর্মসূচির পরিপত্রে যুক্ত হয়েছে তিনটি শর্ত—উপকারভোগী নারীদের অঙ্গীকার করতে হবে, পরিবারের মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেবেন না; শর্ত না মানলে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং যেখানে ১৫-১৮ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়ে রয়েছে বা পরিবার অভিবাসন থেকে ফিরে এসেছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বড়উঠান, জুলধা, শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত চার মাস ধরে চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন করে আবেদন গ্রহণ শুরু হলে যাচাই-বাছাই শেষে আবার চাল বিতরণ শুরু হতে পারে।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা চন্দন চক্রবর্তী বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) থেকেই প্রতিটি ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারে নতুন আবেদন নেওয়া শুরু হবে। তবে পূর্ববর্তী কার্ডধারীরা আবেদন করতে পারবেন না। নতুন তালিকা তৈরি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম আবার চালু করা হবে।’

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm