আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে তুলে নিয়ে মারধর, অভিযোগের তীর নলুয়ার নৌকার প্রার্থীর দিকে

0

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

যে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে তারা হলেন নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী চৌধুরী ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. এমরান। তারা ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা কৃষক লীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমানের অনুসারী।

তবে অপহরণকারী কারা তা চিনতে না পারলেও ঘটনাপঞ্জির কারণে এই ঘটনায় নলুয়া ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. লিয়াকত আলীকেই দায়ী করছেন মিজানুর রহমান।

বৃহষ্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নলুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একটি মাইক্রোবাস করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন জুলফিকার আলী চৌধুরী।

জুলফিকার আলী চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুপুরে অতর্কিত একটি হায়েসে (মাইক্রোবাস) করে কিছু ছেলে এসে নলুয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়িতে তুলে কেরানী হাটের পাশের একটা বিলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের মারধর করে। তারা তাদের ইচ্ছামত কিছু কথা বলিয়ে একটা ভিডিও করে নিয়েছে। তারা আমাদের বলতে বলেছে, নৌকার প্রার্থীর একটা ক্যাম্পে আমরা দুজন আগুন দিয়েছি। আর সেটা করেছি স্বতন্ত্রপ্রার্থী মিজানুর রহমানের নির্দেশে। তাদের কথা মতো ভিডিওতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর তারা আবার আমাদের ছেড়ে দেয়।’

অপহরণকারীদের চিনতে পেরেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আলী বলেন, ‘সকলেই মুখোশ পড়া ছিল। তারা কেউই এলাকার না, বহিরাগত। তবে এটা স্পষ্ট এটা নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনা।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কাজ বলেই মনে হচ্ছে। নির্বাচনের শুরু থেকেই দফায় দফায় তিনি হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর আগে আমার কর্মীদের উপর কয়েকদফায় হামলা হয়েছে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে একজন ফোনে করেছেন। তিনি বলেছেন তিনি অভিযোগ করতে থানায় আসবেন। পরে আর আসেননি। থানায় অভিযোগ করলে আমরা এটি তদন্ত করে দেখবো।’

অভিযোগ রয়েছে, সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত আলী লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। নির্বাচনে লড়তে জালিয়াতি করে বানিয়েছেন নলুয়া ইউনিয়নের জাতীয়তা সনদ। চিহ্নিত মাদককারবারি ও জামাত-শিবিরের পৃষ্টপোষক হিসেবে পরিচিত লিয়াকত আলী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত লিয়াকত আলী দেশি-বিদেশি মাদককারবারিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বরাবরে। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন লিয়াকত। চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করারও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এর আগে ২১ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান শ্বশুরবাড়িতে গেছেন —এমন খবরে সেখানে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি মুখোশ পরিহিত সন্ত্রাসীদল অস্ত্রের মহড়া দেয়। সেখানে ফাঁকি গুলি ছুঁড়ে আতঙ্কও তৈরি করা হয়েছে। পরদিন এ ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের শ্যালক মো. হারুন।

এ বিষয়ে জানতে নলুয়ার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত আলী বলেন, ‘কাল সারাদিন আমি নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। এখন ওনারা এসব বলছেন। আমার ক্যাম্পেও আগুন দিয়েছেন ওনারা। আবার লাইভে এসবও করছেন ওনারা। কেন কি জন্য করছেন তা ওনারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে জুলফিকার ভাইয়ের সাথে আমার কখনো কিছু নিয়ে বিরোধ ছিল না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওনারা এসব প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছেন।’

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোয়নপ্রাপ্ত লিয়াকত আলী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তসলিমা আবছার।

এআরটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm