চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন পরীক্ষার্থী । এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ইংরেজি ও গণিতে। ‘রুব্রিক্স মেথড’ ফলো করে খাতা মূল্যায়নে এমন ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। ফলে মূল্যায়নকারীরা খাতায় অযথা নম্বর দেওয়ার সুযোগ পাননি।
এছাড়া গণিত ও ইংরেজি বিষয় কোচিং নির্ভরতার কারণে শিক্ষার্থীরা এ দুই বিষয়ে পড়েছেন পাস-ফেলের গোলকধাঁধায়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সূত্রে জানা গেছে, এবার এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন। পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৮৮ জন। পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন। এ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ২০৭ জন। এ ফেলের বেশিরভাগ ইংরেজি ও গণিতে।
বিষয়ভিত্তিক পাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলা ১ম পত্রে পাস করেছে ৯৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ইংরেজি ১ম পত্রে পাস করেছে ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, গণিতে পাস করেছে ৮১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
ইংরেজিতে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ছাড়াও মান উন্নয়ন পরীক্ষরার্থী মিলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৯২৫ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩১৪ জন। ফেল করেছে ২১ হাজার ৬১১ জন।
শুধুমাত্র গণিতেই ফেল করেছে ২৪ হাজার ১১ জন। গণিতে পরীক্ষায় নিয়মিত ও মান উন্নয়ন মিলে অংশগ্রহণ করেছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৯ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯৮৮ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণিত ও ইংরেজি খাতায় rubrics বা প্রতিবর্ণীকরণ পদ্ধতি ফলো করতে গিয়ে নম্বর কমে গেছে শিক্ষার্থীদের। খাতায় নম্বর বন্টনে অযথা নম্বর দেওয়া হয়নি। আমার শিক্ষাবোর্ডে এবার এটা নির্দেশ ছিল গণিত খাতা কাটতে গিয়ে শিক্ষকরা যেন রুব্রিক্স নিয়ম ফলো করেন। তাই এবার পাসের হার শতভাগ যথার্থ হয়েছে।’
বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, ‘রুব্রিক্স হল কোনো কাজ বা প্যারফরম্যান্সের মানদণ্ড নির্ধারণ করা। সাধারণত কোনো শিক্ষক বা খাতা মূল্যায়নকারী এই রুব্রিক্স ব্যবহার করে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্প বা পরীক্ষার মূল্যায়ন করে থাকেন। রুব্রিক্সে বিভিন্ন গ্রেড বা মানের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী উল্লেখ করে দেওয়া হয়। যেমন একটা টপিকে কোথায় কত নম্বর দিতে হবে তা উল্লেখ করা থাকে রুব্রিক্সে। এর মূল অর্থ এটাই, গড়ে কোনো নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই খাতায়।’
তিনি বলেন, ‘এবার সব খাতা মূল্যায়নকারী শিক্ষককে সব বিষয়ে রুব্রিক্স ফলো করতে বললেও গণিত ও ইংরেজি ছাড়া আর কোনো বিষয়ে তা হয়নি। আর তার জন্য আর বাকি সব বিষয়ে পাসের হার ৯৫ শতাংশে এমনকি ৯৮ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু সেটি কোনো সফলতা নয়।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন এনসিটিবিতে কাজ করেছি। আমি নিয়মকানুন জানি। না লিখে অযথা নম্বর দিয়ে পাসের হারও জিপিএ ৫ বাড়ানো কোনো শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকের সফলতা নয়। এবার যে ছাত্র গণিত ও ইংরেজিতে পাস করেছে, তারা যথার্থ পাস করেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা টাইম আল্যুকেশন করে পড়াশুনা করে না। কোন বিষয়কে কতটুকু এমপাসিস দিবে তা আগেই ঠিক করার নিয়ম থাকলেও তা তারা করে না।যা ঘটেছে পার্বত্য অঞ্চলে।
এছাড়াও গণিত ও ইংরেজিভীতি না কাটার পেছনে কোচিং সেন্টারও একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোচিংয়ে মুখস্থনির্ভর পড়াশোনার বদৌলতে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে কোচিং থেকে সিট দিয়ে মুখস্থ করানো হয়। যার প্রভাব পড়ছে ফলাফলে।’
ডিজে