ধর্মঘটের পর চট্টগ্রাম নগরীতে বাস চলাচল শুরু হলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত। এসব গণপরিবহনে দ্বিগুণ, এমনকি তিন গুণ বেশি ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা ও কক্সবাজারগামী দূরপাল্লার বাসগুলোতেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত।
ডিজেলসহ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে টানা তিনদিনের পরিবহন ‘ধর্মঘট’ শেষে বাসভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসতেই রোববার থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। এর পর থেকে শুরু হয় বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রতিযোগিতা। টাইগারপাস থেকে আগ্রাবাদ যেতেও ৫ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরপাল্লার বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা বেশি।
সরকার ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে, শুধুমাত্র ডিজেলচালিত গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসচালিত গাড়ি চলবে আগের ভাড়া অনুযায়ীই। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, এখন সব গাড়িই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম ও ঢাকা নগরীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসই সিএনজিচালিত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক যাত্রী বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর মাধ্যমে ডিজেলচালিত যানের আন্দোলন শেষ হল। মাঝখানে অবস্থান করা গ্যাসচালিত যানবাহনও একই ভাড়া নেবে আর বলবে আমাদের গাড়িও ডিজেলে চলে। শেষমেশ জনগণেরই পকেটমার!’
যাত্রীরা বলছেন, বাসভাড়া বাড়ানোর কারণে স্বল্প আয়ের লোকজনের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাসভাড়া বাড়ানো গরিবের ওপর বোঝা চাপানোর সমান বলে তাদের অনেকে মন্তব্য করেন।
এদিকে রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া সমন্বয় করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
নতুন সমন্বিত ভাড়া অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বেড়েছে। ফলে মহানগর এলাকায় একজন বাসযাত্রীকে পাঁচ কিলোমিটার ভ্রমণের জন্য বাড়তি ২ টাকা ২৫ পয়সা গুনতে হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। এটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। এতে ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা। ফলে মহানগর এলাকায় চলাচলকারী মিনিবাসের ভাড়া পাঁচ কিলোমিটারে ২ টাকা ২৫ পয়সা বাড়লো।
অন্যদিকে দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা, তা বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ এতে কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দূরপাল্লার একজন যাত্রীকে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে ১ টাকা ৯০ পয়সা বেশি ভাড়া দিতে হবে।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ভোক্তাপর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সকল গণপরিবহন বন্ধ রাখে বাস, ট্রাক ও লঞ্চ মালিকরা।
এদিকে বাসের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার বাসের ভাড়া বাড়ালেও ডিজেলের দাম কমানো নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না। যাত্রী প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মালিকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার গণশুনানি ছাড়া অবৈধভাবে একলাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এই অজুহাতে পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করেন বাসের মালিকরা। যখন গ্যাসের দাম বাড়ে, তখন বাস মালিকরা বলেন, সব বাস গ্যাসে চলে। আর এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস মালিকরা বলছেন, সব বাস ডিজেলে চলে।
মোজাম্মেল হক বলেন, কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়ানোর কথা না। যখন ডিজেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমানো হয়েছিল, তখন ভাড়াও প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানো হয়। এখন তাহলে কেন এত ভাড়া বাড়বে।
সিপি