চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু

প্রায় দেড় মাস পর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে এক প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অ্যাসাইটিসের সঙ্গে প্লুরাল ইউফিউশনের ফলে তার ফুসফুসে পানি জমে বিকল হয়ে পড়ে।

মৃত শিশুর নাম নাদিয়া জান্নাত তাসকিয়া। সে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিমের সন্তান।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বুধবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নাদিয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে সীতাকুওন্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রেফার্ড করা হলে মেডিকেল সেন্টারের এনআইসিইউ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তাসকিয়ার বাবা মোহাম্মদ সেলিম জানান, মেয়েটি আমার প্রতিবন্ধী ছিল। তার জ্বর ছিল ৩ দিন। বাড়ির পাশের দোকান থেকে কিনে নাপা খাওয়ায় তাকে। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে তাকে বিআইটিআইডিতে দেখালে, সেখানে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা দেখেন, আমার মেয়ের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে, শ্বাসকষ্টও ছিল। এরপর তাকে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করে এনআইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে ৬ দিন ছিল আমার মেয়ে। মেডিকেল সেন্টার থেকে জানানো হয়, তাদের চেষ্টা সব ব্যর্থ। তখন আমি আমার মেয়েকে এভারকেয়ারে নিয়ে যাই গতকাল সকাল ১১টায়। রাতে মারা যায় আমার মেয়ে।

মো. সেলিম আরও বলেন, আমার দুই মেয়ে। তাসকিয়া ছোট ছিল। আমার মেয়েকে শহরের সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েও বাঁচাতে পারিনি।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এনিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক যুবক মারা যায়। তার নাম আফফাত নূর তানভীর (২৮)।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৪ জন ভর্তি হয়েছে। চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ হাজার ৯৮৩ জনে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৮ জন পুরুষ, ১ হাজার ১৭৬ নারী এবং ৭০৯ জন শিশু।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, নাদিয়া জান্নাত তাসকিয়া নামের শিশুটি ডেঙ্গু সিনড্রোম, অ্যাসাইটিসের সাথে দ্বিপাক্ষিক প্লুরাল ইউফিউশন হয়ে মারা গেছে।

এ রোগ সম্পর্কে তিনি জানান, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ডেঙ্গুর ক্রিটিক্যাল একটি স্টেপ। এতে শরীরের রক্তনালী থেকে তরল বের হয়ে যায়। যার ফলে রক্তচাপ অনেক নিচে নেমে যায়। এর কারণে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। আ্যাসাইটিসে পেটের ভেতর পানি জমে যায়। ডেঙ্গুতে রক্তনালী থেকে তরল বেরিয়ে পেটের ভেতরে চলে যায়। এর ফলে পেট ফুলে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আর দ্বিপাক্ষিক প্লুরাল ইফিউশনটা হলো—ফুসফুসের চারপাশে পানি জমে ফুসফুসের কার্য ক্ষমতা ডেকলাইন পর্যায়ে চলে যায়।

আইএমই/ডিজে

ksrm