ছয় মাস আগে একদল দুর্বৃত্ত রাতের আঁধারে তাকে আটকে লোহার রড দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। এক হাঁটু প্রায় দুই ভাগ হয়ে যায় প্রচণ্ড আঘাতে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিরিচ চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। সেই থেকে অকাল পঙ্গুত্ব নিয়ে দিন কাটছিল নিজের বাড়িতে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেই সাইফুল্লাহকে এবার গ্রেপ্তার করা হল ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’।
সাতকানিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া অপর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন খাগরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য সোহেল আরাফাত (৩৫)।
গ্রেপ্তার সাইফুলের স্বজনরা জানিয়েছেন, হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে স্ট্রেচারে করে বাড়ির ভেতরে চলাফেরা করতেন সাইফুল। সহযোগিতা ছাড়া এমনকি বাথরুমেও যেতে পারেন না তিনি।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আসামিদের আদালতে সোপর্দ করার সময় সাতকানিয়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দেওয়া আবেদনেও উল্লেখ করেছেন, ‘১ নম্বর ক্রমিকের আসামি সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল্লাহর ডান পায়ে হাঁড় ভাঙ্গা জখম সংক্রান্তে অপারেশন করা হয় বিধায় বর্ণিত আসামি স্ট্রেচারে করে হাঁটাচলা করে।’
প্রচণ্ড মারে হাঁটু দুই ভাগ
এর আগে গত বছরের ১৬ আগস্ট রাত ৯টার দিকে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্থানীয় বাংলাবাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে একদল দুর্বৃত্ত মির্জাখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তার পথ আটকায়। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা একযোগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তদের হাতে লোহার রড, ধারালো কিরিচ, রিক্সার চেইনসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল। এগুলো দিয়েই ওই আওয়ামী লীগ নেতার হাত-পা প্রায় ভেঙে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাম পায়ের অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর। তার শরীরের অন্যান্য স্থানও কিরিচের আঘাতে গুরুতর জখম হয়।
সাইফুলের স্বজনরা বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে পরে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে একাধিকবার তার অস্ত্রোপচার করার পরও তার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি বলে তার স্বজনরা জানান। বিশেষ করে হাঁটুর জয়েন্টসহ একাধিক স্থানের আঘাত অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায় তার পঙ্গুত্ব বরণের সম্ভাবনাই বেশি বলে চিকিৎসকরা জানান।
শয্যাশায়ী সাইফুল ইসলাম ওই সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন, আমার হাঁটু দুই পার্ট হয়ে গেছে। লাঠি দিয়ে তারা হাঁটুর নিচে প্রচণ্ড জোরে বাড়ি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই।’
হামলাকারীদের চিনতে পেরেছিলেন কিনা— এমন প্রশ্নে সাইফুল বলেন, ‘তারা ১৫-২০ জন ছিল। সবার মুখে মাস্ক পরা। আমি কাউকে চিনতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার পঙ্গু অবস্থা দেখে আমার ছেলেমেয়েরা কান্নাকাটি করছে। আমি তো কখনও অন্যায় কিছু করিনি। তাহলে আমাকে কেন পঙ্গু করা হল? আমি তো দেশবিরোধী কিছু করিনি, কারও মনে কখনও কষ্ট দিইনি, তাহলে আমার ওপর এভাবে কেন হামলা করা হল?’