কমিটিতে পদ না পেয়ে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ হঠাৎ লালখানবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বসে। আকস্মিক এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ চরমে দুর্ভোগে পড়ে যান। রাস্তায় রাস্তায় দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। এক ডেলিভারির রোগী অনুরোধ করেও হাসপাতালে যেতে পারেননি। শত অনুরোধেও ছাত্রদের মন গলেনি। এসব চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন এক গণমাধ্যমকর্মী। ক্যামেরার সামনে এসে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন আন্দোলনকারীরা। তাদের পক্ষে না বলায় মারমুখী আচরণও করে তারা।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।

মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ কমিটি বাতিলের দাবি জানান কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের অনুসারী নেতাকর্মীরা। তারা বিকাল ৩টার মধ্যে সদ্যঘোষিত তিন কমিটি বাতিল, আগামী তিনদিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন সবার সামনে আনা এবং কমিটি গঠনে জড়িতদের পরিচয় জানানোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ করে সড়ক অবরোধ করে বসেন পদবঞ্চিতরা। নগরীর লালখানবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর থেকেই শুরু নগরবাসীর দুর্ভোগ। যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসময় শেষ হয় সড়কে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে সাধারণ যাত্রী ও গাড়িচালকদের। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলাধারা’র কর্মী আব্দুর রহমান ইমন। প্রায় সাত ঘন্টা পর রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ছুঁড়ে দিয়ে পদবঞ্চিত নেতারা সড়ক ছেড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংবাদকর্মী আব্দুর রহমান ইমনের ফেসবুক লাইভের সামনে হঠাৎ করে তেড়ে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদবঞ্চিত কিছু নেতাকর্মী। টান দেন ক্যামেরায়। জোর করেন তাদের পক্ষে বলার জন্য। একপর্যায়ে ক্যামেরার সামনে এসে অশোভন অঙ্গভঙ্গিও করেন একজন। তেড়ে এসে পুরুষাঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে বলে ‘ক্যামেরা এদিকে ঘুরান। এদিকে ঘুরাতে বলতেছি, এদিকে।’
ঘটনার শিকার আব্দুর রহমান ইমন বলেন, ‘আমি নগরীর লালখানবাজারে বৈষম্যবিরোধীদের একাংশের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি কাভার করতে যাই। লাইভে তাদের সমন্বয়কদের বক্তব্যও নিয়েছি। এক পর্যায়ে আমি সড়কে যান চলাচলে তীব্র ভোগান্তি ও যানজটের কথা লাইভে বললে আমার ওপর তাদের কয়েকজন চড়াও হয়ে যান। তারা আমার ক্যামেরাপার্সন ও আমার গায়ে হাত দিয়ে লাইভের মোবাইল নামাতে বলেন। আমি অস্বীকার করলে তারা চড়াও হয়ে আমাকে ও আমার ক্যামেরাপার্সনকে হেনস্তা করে।’
জানা গেছে, সাংবাদিককে হেনস্তা করা ওই যুবকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের অনুসারী। এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
এ ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। রবিউল রবি নামের এক সংবাদকর্মী লিখেছেন, ‘হঠাৎ সড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগের এসব চিত্র সরাসরি সম্প্রচারে তুলে ধরছিল ছোট ভাই আবদুর রহমান ইমন। এ সময় তাকে মারতে উদ্যত হয় এক ছেলে! ইমনের সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করা হয়েছে।’