চট্টগ্রামে বিয়ে-শাদিতে গলাকাটা বিল, কমিউনিটি সেন্টারে সবকিছুর বাড়তি খরচ
ভাড়া নির্ধারণে সরকারি হস্তক্ষেপ চায় ক্যাব
চট্টগ্রামে বিয়ে-শাদি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজন করতে গিয়ে মানুষকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হল ভাড়া, খাবার সরবরাহ, সাজসজ্জা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিবাহ লগ্নে এই খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। খাবারের বিল থেকে শুরু করে চেয়ার, লাইট, সাউন্ড সিস্টেম—সবকিছুতেই গ্রাহকের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি ব্যয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি এ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম ও ভাড়া নৈরাজ্য চললেও সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কার্যকর নজরদারি নেই।
ভাড়া ও খরচের নাম করে চরম ভোগান্তি
ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে অন্তত ৩০০ অতিথির একটি সাধারণ বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য এক লাখ টাকার নিচে কোনো কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া পাওয়া যায় না। বড় আয়োজনে এই খরচ দাঁড়ায় ৫–৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হয় সাজসজ্জা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের খরচ, যা অনেক ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গড়ায়। তবে এ সেবা নিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে সেন্টার কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
খাবারের খরচ নিয়েও চলে প্রতারণা। অনেক কনভেনশন হলে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার নিতে বাধ্য করা হয়। এসব খাবারের দাম নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্নার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আলাদা করে দিতে হয় বিদ্যুৎ বিল, এলইডি লাইট, ভিডিওগ্রাফি ও চেয়ারের ভাড়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের মৌসুমে এই খরচ তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যায়।
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি
ক্যাব অভিযোগ করেছে, এই সেন্টারগুলো অতিথির সংখ্যা অনুযায়ী কড়ায়গণ্ডায় বিল আদায় করলেও সরকারের ভ্যাট ফাঁকি দেয়। ভ্যাট আদায়কারী কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে নামমাত্র পরিমাণে ভ্যাট জমা দেওয়া হয়। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি ভোক্তারা দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি
ক্যাব আরও জানিয়েছে, এসব অনুষ্ঠানে পরিবেশিত খাবারে নানা ধরনের নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। মানহীন ঘি, কৃত্রিম সুগন্ধি ‘কেওডাজল’, ক্ষতিকর রং ও রাসায়নিকের মিশ্রণে তৈরি খাবার অতিথিদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। অথচ এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বা ভোক্তা অধিদপ্তরের কোনো কার্যকর তদারকি নেই।
যানজট সমস্যা
শুধু খরচ নয়, অনুষ্ঠান চলাকালে যানজটও বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সেন্টার পর্যাপ্ত পার্কিং বা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না করায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এতে পুরো নগরীর যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।
ক্যাবের দাবি
বুধবার (১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবুদল মান্নান, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লেুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি কলামিস্ট মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল ও যুগ্ন সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু এ পরিস্থিতি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তাদের দাবি, কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হলের ভাড়া এবং খাবারের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করা জরুরি।
ক্যাব মনে করে, এ ধরনের নৈরাজ্য অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে আরও চাপে পড়বে। তাই ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।