টি কে গ্রুপের কারখানায় বড় জালিয়াতি, ভুয়া কাগজে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস চুরি
বদলি কর্মকর্তার স্বাক্ষরে জাল এনওসি
ক্যাপটিভ বিদ্যুতের সংযোগ পেতে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে টি কে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘কর্ণফুলী স্টিল মিলস লিমিটেড’র বিরুদ্ধে। বিদ্যুৎ বিভাগের বাধ্যতামূলক অনাপত্তিপত্র জাল করে ১৬.৮ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। ২ বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়া সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী বানিয়ে ভুয়া এনওসিটি তৈরি করা হয়।
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন কর্ণফুলী স্টিল মিলটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বড় কুমিরা এলাকায় অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাখিলকৃত অনাপত্তিপত্রে যে কর্মকর্তার স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে, ওই সময়ে তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন না। এছাড়া তিনি সে সময় সহকারী প্রকৌশলী পদমর্যাদার কর্মকর্তা হলেও তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী বানিয়ে এনওসি তৈরি করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৩১ আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী, অনাপত্তিপত্র ছাড়া গ্যাস সংযোগ অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, ১০ মেগাওয়াটের বেশি ক্যাপটিভ বিদ্যুতের সংযোগ পেতে গেলে বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানির পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমার জানামতে এ রকম কোনো এনওসি ইস্যু করা হয়নি।
ভুয়া এনওসিটি পিডিবির চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরে দাখিল করা হয়েছে। যাতে তারিখ উল্লেখ রয়েছে, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ফৌজদারহাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ওই ধরণের এনওসি দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
ওই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবি চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন জানান, এমন কোনো চিঠি তার নজরে আসেনি। আর যখন (২০২০ সাল) এনওসিটি ইস্যু করা হয়েছে, তখন তিনি এখানে ছিলেন না।
এনওসিটি তাকে দেখানো হলে তিনি জানান, স্বাক্ষরটি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (চকরিয়া) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এমন কোনো চিঠি দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ছে না। আর ক্যাপটিভের এনওসির চিঠি আমাদের দপ্তর থেকে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের দপ্তরে কোনো আবেদন এলে আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে প্রেরণ করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, ফৌজদারহাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলাম। তারপর বদলি হয়ে বাড়বকুণ্ডে পোস্টিং দেওয়া হয়। আমি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করিনি। ফলে এই স্বাক্ষর আমার দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এটা জাল হতে পারে।
জালিয়াতি বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী স্টিল মিলসের সিনিয়র ডিজিএম মো. আব্দুর কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এজিএম গৌতম সাহেবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে এনওসি জমা করা হয় তখন এখানে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে আমার দপ্তরের ম্যানেজার নূরে আলম সিদ্দিকী আমাকে জানিয়েছে, তারা নাকি এনওসিটি ভেরিফাই করেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, টি কে গ্রুপের বেশিরভাগ কাগজপত্র ভুয়া এবং বানানো। আমি যখন কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে কর্মরত ছিলাম, তখন তাদের অনেক কাগজ ভুয়া ধরেছি।
টি কে গ্রুপ ভোজ্যতেল, ময়দা, চা, সিমেন্ট, রাসায়নিক, কাঠের বোর্ড, হ্যাচারি থেকে শিপ বিল্ডিংয়ের মতো পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করছে।
ডিজে