চট্টগ্রামে বোধনের নতুন নেতৃত্বে নারায়ণ–মাঈনুল, ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নানা আয়োজন

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দিনভর উৎসবমুখর আবহে অনুষ্ঠিত হলো বোধন-এর ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। ‘প্রস্তর ভরা দুই কূল তোর ভেসে যাক বন্যায় হোক উর্বর, হাসিয়া উঠুক ফুলে ফলে সুষমায়’ শিরোনামের এই আয়োজনের শুরু থেকেই সম্মেলনকে ঘিরে ছিল আবেগ, স্মৃতি আর সংগঠনের গৌরবময় যাত্রার উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। অনুষ্ঠানের পুরো সময়জুড়ে বোধন-এর প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট রবিশংকর চক্রবর্তী, উপদেষ্টা মফিজুর রহমান, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মৃণাল সরকার, সভাপতি ও অধ্যক্ষ রণজিৎ রক্ষিত এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পঞ্চানন চৌধুরীর স্মরণে রাখা হয় বিশেষ উৎসর্গ।

সকাল থেকে উৎসবমুখর আয়োজন

সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, অধ্যাপক ডা. মোহিত উল আলম। বোধনের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষ। উদ্বোধনী ঘোষণা দেন বোধনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট সুভাষ বরণ চক্রবর্তী। এর পর বোধনের সদস্যদের বৃন্দ আবৃত্তি দিয়ে প্রথম পর্বের কার্যক্রম শুরু হয়।

আলোচনা সভায় নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের অংশগ্রহণ

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বোধনের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোহিত উল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজী, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান, সংগঠক ও কবি রাশেদ রউফ এবং সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার লিলি বড়ুয়া। আলোচনায় বক্তব্য দেন বোধনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ দাশ ভুলু এবং সহ–সভাপতি অ্যাডভোকেট নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব জাভেদ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিশু সাহিত্যিক উৎপল কান্তি বড়ুয়া, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি দীপেন চৌধুরী, নাট্যজন মোহাম্মদ আলী টিটু, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুল, উদীচীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রমেন দাশগুপ্ত, সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের সভাপতি ফারুক তাহের, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত পাল, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সদস্য অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, দৃষ্টির সহ–সভাপতি বনকুসুম বড়ুয়া, নাট্যজন আবদুল হাদী, আলোকচিত্রশিল্পী কমল দাশ এবং সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম। বক্তারা বলেন, বোধন দীর্ঘদিন ধরে মাতৃভাষার শুদ্ধতা ও প্রগতিশীল–অসাম্প্রদায়িক চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এই ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।

দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

সাংস্কৃতিক আয়োজনে আধুনিক গান পরিবেশন করেন দেবলীনা চৌধুরী, দীপা দাশ এবং টম্পী রানী ভৌমিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন পৃথুলা চৌধুরী, যশস্বী বণিক ও পাতা দে বৃষ্টি। দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন প্রণিতা দেব চৈতী ও প্রিয়ন্তী দেব দীগা, লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন বেবী দাশ নূপুর ও শাওন প্রিয়া চৌধুরী। একক নৃত্যে অংশ নেন উনাইজা ওয়াফা তিতির। বোধন সদস্যদের পরিবেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি ‘হিং টিং ছট’ এবং সদস্য রাজবীর সব্যসাচী আকাশের যাদু প্রদর্শনীও দর্শকদের মনোযোগ কাড়ে।

কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন

বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলনের আহবায়ক সুজিত রায় এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব জাভেদ হোসেন। এ সময় গত তিন বছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী। নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার লিলি বড়ুয়া, সহায়তায় দায়িত্ব পালন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব অলক ঘোষ পিন্টু ও সঙ্গীতশিল্পী শাহরিয়ার খালেদ।

নতুন কমিটিতে নারায়ণ সভাপতি, মাঈনুল সাধারণ সম্পাদক

কাউন্সিলরদের ভোটে ২০২৬–২০২৮ মেয়াদের নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন সভাপতি অ্যাডভোকেট নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আজম চৌধুরী। সহ–সভাপতি হয়েছেন জাভেদ হোসেন ও প্রণব চৌধুরী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক তৈয়বা জহির আরশি, অর্থ সম্পাদক অনিমেষ পালিত, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মোহিনী সংগীতা সিংহ, দপ্তর সম্পাদক পৃথুলা চৌধুরী এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সন্দীপন সেন একা। নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল হালিম দোভাষ, প্রশান্ত চক্রবর্তী, কুমার প্রীতীশ বল, সুদীপ বড়ুয়া খোকন ও সুজিত রায়।

নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার মধ্য দিয়ে বোধনের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষ হলেও সংগঠনের আগামী দিনের কর্মকৌশল ও সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।