কারও কারও শখ ছবি তোলা। কোথাও ঘুরতে যাওয়া, চলার পথে প্রকৃতি কিংবা নিজের প্রিয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে মানুষ ছবি তোলে। কখনো পেশাদারের মতো, আবার কখনো এমনিতেই তার ফ্রেমে বন্দি হয় মুক্ত পাখিদের উড়ে চলা, বন্দি হয় বাস্তবতা মেনে চলা করুণ জীবনের চিত্র। বন্দি হয় কলকল করে বয়ে যাওয়া নদী কিংবা সবুজ পাহাড় অথবা আকাশ। প্রকৃতিকে সে তার নিজের লেন্সে আটকে রাখে। বর্তমানে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
এমন ছবিপ্রেমী মানুষদের জন্যই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আলোকচিত্র বিষয়ক সংগঠন চুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ দিনব্যাপী জাতীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী উৎসব ‘ক্যাচ দ্যা লাইট সিজন–৩’।
দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জমা পড়া প্রায় পাঁচ হাজার আলোকচিত্রের মধ্যে বিচারক মণ্ডলী মোট ১৬৬টি ছবি প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করেন। নির্বাচিত ছবির মধ্যে একক বিভাগে ছিল ১০৪টি ছবি, এবং ফটো স্টোরিজ (একাধিক ছবি মিলে গল্প নির্মাণ) বিভাগে ১০টি সিরিজ স্থান পায়।
৫ দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দুই দিন এসব ছবি চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত হয়। ২৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী। মূল শহরে প্রদর্শনীর পর শুরু হয় চুয়েটের বাস্কেটবল মাঠে প্রদর্শনী পর্ব। পাটের বস্তা দিয়ে তৈরি নান্দনিক দেয়ালে টাঙানো হয় ছবিগুলো। মন–কাড়া আলোকসজ্জা ও অজানাকে জানার আগ্রহে ছবিগুলো দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
প্রদর্শনীস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য দর্শকরা একক ফটোগ্রাফি ও ফটো স্টোরিজের পাশাপাশি বিভিন্ন থিমভিত্তিক কাজ পরিদর্শন করছেন। দেয়ালে ঝোলানো ছবির সাথে কেউ কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ ছবি দিয়ে নির্মিত গল্প পড়ছেন। সব মিলিয়ে আলোকচিত্রীদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, রঙ–রূপের বৈচিত্র্য এবং ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
প্রধান অতিথি আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী বলেন, আমার সত্যিই ভালো লাগছে যে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা এতো সুন্দর আয়োজন করেছে। ছবিগুলোও বেশ ভালো। আয়োজকদের ধন্যবাদ ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিতু সাহা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ছবিগুলো সত্যি দারুণ। প্রতিটা ছবি যেন নিজের একটা গল্প বলে। অসাধারণ আয়োজন! আলো–ছায়া আর অনুভূতির সুন্দর মিশেল। স্মৃতিকে থামিয়ে রাখার এমন সুন্দর প্রয়াস খুব কমই দেখা যায়। আমার বেশ ভালোই লেগেছে প্রদর্শনী।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে চুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদমান সারার বলেন, প্রায় ৭ বছর নানা কারণে আমাদের জাতীয় প্রদর্শনীটি আয়োজন করা হয়নি। তবে এবার আমাদের সবার দলগত কাজ, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে আমরা এরকম একটি জাতীয় উৎসব নামাতে পেরেছি। সবার প্রতি আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। দেশের এতো এতো চমৎকার আলোকচিত্র আমাদের এই উৎসবে জমা পড়েছে সেজন্য আমরা সকলে সত্যিই আনন্দিত।
চুয়েটে এই প্রদর্শনী উৎসব শেষ হয় ২৯ নভেম্বর। ওইদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণীতে অভিজ্ঞ বিচারকদের যাচাই–বাছাই শেষে নির্বাচিত আলোকচিত্রীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
একক আলোকচিত্র ক্যাটাগরিতে ৩য় স্থান অধিকার করেন ফ্রিল্যান্সার সাহিত্য রাফি, ২য় হন রুয়েট শিক্ষার্থী সাদিক রুদ্র ও ১ম স্থান অধিকার করেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজের নাহিয়া সুলতানা উর্মি। অপরদিকে ফটো স্টোরিজ ক্যাটাগরিতে ৩য় হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদুল ইসলাম, ২য় স্থান অধিকার করেন জাবির ইবনে সিদ্দিক।
১ম স্থান অর্জন করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী বিজন কৃষ্ণ পাল। বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণীর পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা নামে এই বিশেষ উৎসব ‘ক্যাচ দ্যা লাইট সিজন–৩’ এর।
এনএন/ডিজে


