‘ভাই, আমি প্রতিদিনের মতো চাকরিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনতে পাই, আমার বাসায় আগুন লেগেছে। এসে দেখি, আমার ঘর বলতে কোনো কিছু বাচাঁতে পারি নাই। আমার ঘরে ছিল ভোটের আইডি কার্ড, বিভিন্ন কাগজপত্রসহ কিছু টাকা। আমি চাকরি করে তিল তিল করে জমিয়েছি কিছু টাকা। ভেবেছিলাম, টাকা জমিয়ে মেয়ের বিয়ে দিবো। কিন্তু কিছুই বাচাঁতে পারলাম না ভাই। আগুন আমার সব কিছু পুড়ে ছাই করে দিয়েছে’—কান্না করতে করতে এমন আহাজারি করছিলেন পোশাকশ্রমিক সেলিমা আক্তার।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার অক্সিজেন এলাকার এক বস্তিতে আগুন লাগছে সেলিমার মতো শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বস্তিতে আগুন নেভানোর পর যখন কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠছিল, তখন বস্তির পাশেই রেললাইনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন কাউসার নামের এক বৃদ্ধা। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমার কষ্টের সব টাকা আমি জমিয়ে রেখেছিলাম। ভাবলাম, শেষ সময় এসে ছেলেমেয়েসহ একসাথে থাকার জন্য একটি ঘর তৈরি করবো। কিন্তু আমার জমানো সব টাকাই এখন পুড়ে ছাই।’
বৃদ্ধা কাউসারের মতো রহমত আলীও বসেছিলেন বস্তির এক কোণে। মুখে হাত দিয়ে চিন্তিত তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন আমি কনেই থাকবো, আল্লাহ’ই জানে। আমার বাড়ি যশোর। আগুন লাগার সাথে সাথে সুযোগ পাইনি কিছু নিয়ে বের হওয়ার। যেগুলো পড়ে বের হয়েছি, সেগুলোই রয়েছে।’ এভাবে বলতেই কান্নাই ভেঙে পড়েন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখানে এসেছিলাম কিছুটা বাড়তি আয়ের আশায়। এখন যে পরিস্থিতি, সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এজন্যই এসেছিলাম বাবা। কিন্তু এখন আমার বলতে আর কিছুই না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ আগুন লাগে। পাশের কেডিএস কারখানা থাকায় আশপাশের লোকজন প্রথমে মনে করেছিলেন, আগুন সেখানে লেগেছে। কেডিএস কারখানায় কর্মীদের সতর্ক করে অ্যালার্মও বাজানো হয়। পরে কেডিএস কারখানার অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় শতাধিক বসতঘর। ধারণা করা হচ্ছে, ফ্যানের শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।’
ডিজে



