চট্টগ্রাম কলেজে আবার ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা, অভিযোগের তীর শিবিরের দিকে

চট্টগ্রামে কলেজে আবার ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। শুরুতে বাকবিতণ্ডা, পরে হাতাহাতি— ঘটনা গড়িয়েছে এভাবে। ছাত্রদল এ ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করেছে। শিবির বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের হাতাহাতি হয়েছে। এতে তারা জড়িত নয়।

চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার তিন মাসের মাথায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন।
চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার তিন মাসের মাথায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে চট্টগ্রাম কলেজে শেরেবাংলা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।

ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের কয়েকজন কর্মী কলেজে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে গেলে কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির নেতৃত্বে শিবিরকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতারা বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’রা তাদের বাধা দেয়।

হামলার শিকার চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন চলছিল। আমরা গিয়েছি নিয়মিত ক্লাস করতে। শেরেবাংলা হলের সামনে দুপুর ১২টা-সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ আমাদের ওপর হামলা চালায় শিবিরের নেতাকর্মীরা। হামলাকারীদের মধ্যে ছিল রাজনীতিবিজ্ঞান মাস্টার্সের হানিফ, হামিম আবদুল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রিদওয়ানুল হকসহ আরও বেশ কয়েকজন।’ এর মধ্যে হামিম আবদুল্লাহ সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হয়েছেন। তবে হামিম মূলত কলেজ ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি— ছাত্রদল এমন অভিযোগ করলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওমর ফারুক বলেন, ‘শিবিরের হামলায় আরও আহত হয়েছেন রাজনীতিবিজ্ঞান মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রিদুয়ান ইসলাম, মোহাম্মদ কায়েস ও মোর্শেদসহ আরও কয়েকজন।’

এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক সিরাজী মানিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে ছাত্রদল বেশ কয়েকবার ক্যাম্পাসে এসেছে। এ নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। আজকেও ছাত্রদল লিফলেট নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে এসেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেওয়ার পর এ নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে।’

কিন্তু হামলায় যাদের নাম এসেছে, তারা তো শিবিরকর্মী হিসেবে পরিচিত— এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজী মানিক বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে শিবিরের কোনো কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগের স্টাইলে ছাত্রদল সবকিছুর দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। হাতাহাতির ঘটনায় যাদের নাম এসেছে, তারা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।’

গত বছরের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ হওয়ার তিন মাসের মাথায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন। সেখানে শিবিরের নেতাদেরও তার সঙ্গে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাদিক কাইয়ুম এসেছিলেন। উনি সমন্বয়ক হলেও শিবিরের নেতা ছিলেন। সে কারণে ছাত্রশিবিরের দু একজন তো সঙ্গে থাকতে পারেই।’

ছাত্রদল নেতারা অবশ্য আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, ছাত্রশিবিরকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই কলেজ প্রশাসন চট্টগ্রাম কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে।

এর আগেও দুই দফায় পেটানো হয় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের

এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে। মেয়েদের সঙ্গে ‘কথা বলা’র অভিযোগ এনে ধরে নিয়ে ছাত্রদলের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মীকে দুই দফায় মারধর করা হয়। ছাত্রদল অভিযোগ করে, শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র ও রামদা হাতে মারধরের পর আহতদের সিএনজিতে তুলে কলেজছাড়া করে। হামলার সময় দুটি ককটেল বিস্ফোরণও ঘটানো হয় বলে তারা অভিযোগ করে। পরে আহত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, অধ্যক্ষের ভবনের সামনে মেয়ে সহপাঠীসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ছাত্রদলের কর্মী আশরাফুল ইসলাম। এ সময় ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন ক্যাম্পাসের ভেতরে মেয়েদের সঙ্গে কেন কথা বলছেন তিনি। উত্তরের অপেক্ষা না করেই শিবিরের নেতাকর্মীরা তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে মারধর শুরু করেন। এ ঘটনায় আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও এই হামলা আহত হন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল করিম আরিয়ান, শরীফুল ইসলাম আবির, আজিজুল হক নাঈম ভূইয়া ও শোয়াইবুল ইসলাম।

ছাত্রশিবিরের নেতারা অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন বলে জানান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm