ডিসি ‘স্যার’ যাবেন— তাই স্কুলের মাঠ গিলে একরাতে তৈরি হলো রাস্তা!

১৩ হাজার ইট, ২০ ট্রাক বালি, ৩৩ শ্রমিক

চারপাশে তখন বৃষ্টি, কাদায় ভরে আছে স্কুল মাঠ। অথচ রাতভর চললো নির্মাণকাজ। ইট-বালু আর শ্রমিকের ব্যস্ততায় বদলে যেতে থাকে বাঁশখালীর একটি স্কুলের চেহারা। কেন? কারণ সকালে আসছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম! তার গাড়ি যেন কাদামাটিতে আটকে না যায়, সেজন্য রাতারাতি ২০০ ফুটের একটি অস্থায়ী সড়ক বানিয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন, একটি স্কুলের খেলার মাঠের বুক চিরে।

বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের ভেজা মাঠে লালগালিচায় হেঁটে গিয়ে বৃক্ষরোপণ করেন ডিসি ফরিদা খানম।
বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের ভেজা মাঠে লালগালিচায় হেঁটে গিয়ে বৃক্ষরোপণ করেন ডিসি ফরিদা খানম।

ডিসির কয়েক ঘণ্টার সফর ঘিরে এক রাতেই খরচ হলো লাখ টাকা, মাঠে ঢুকলো ১৩ হাজার ইট, ২০ ট্রাক বালি, আর ৩৩ জন শ্রমিক। শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলো না খেয়ে, শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তাকে অভ্যর্থনা জানাতে।

সকালে হঠাৎ স্কুলের মাঠে সড়ক দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েন।
সকালে হঠাৎ স্কুলের মাঠে সড়ক দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েন।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে হঠাৎ করে রাতারাতি এই সড়ক তৈরি করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

কয়েক ঘণ্টার সফরে বাঁশখালী যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম।
কয়েক ঘণ্টার সফরে বাঁশখালী যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিদ্যালয়টিতে ‘জয়ন্তী কর্ণার’ ও ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ উদ্বোধনে আসেন ডিসি ফরিদা। আর তার গাড়ি যাতে কাদামাটির মাঠে ঢুকতে পারে, সে জন্য সোমবার রাতভর চলে ইট-বালুর কাজ।

বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক মূল সড়কের পাশেই থাকলেও মাঠে কাদা থাকায় সরাসরি মঞ্চের কাছে গাড়ি নেওয়ার ব্যবস্থা করতেই তৈরি করা হয় প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ অস্থায়ী এই সড়ক। এতে ব্যবহার করা হয় প্রায় ১৩ হাজার ইট, ২০টি ট্রাক বালি এবং ৩৩ জন শ্রমিক। কাজ চলে রাতভর বৃষ্টির মধ্যেও। ব্যয় হয় প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্ময় ছড়ায়। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ মাঠে সড়ক দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়ে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা দেয় অসন্তোষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রেখে জেলা প্রশাসককে বরণ করানোর ঘটনায়।

শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল থেকে না খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা ডিসি স্যারের আগমনের অপেক্ষায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজেই পকেটের টাকা খরচ করে নাস্তা কিনে খেতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোতোষ দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিসি মহোদয়ের গাড়ি যাতে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্যই মাঠে অস্থায়ী সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রশাসন করেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়। আমার স্কুলকে এ বিষয়ে জড়াবেন না।’

তবে উপজেলা প্রশাসনের ব্যাখ্যা খানিকটা ভিন্ন। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই সড়ক শুধু ডিসি মহোদয়ের জন্য নয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্যও করা হয়েছে। এটি মাঠের মাঝখানে নয় এবং আলাদা কোনো ব্যয় হয়নি। একটি প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হয়েছে।’

তবে স্থানীয়রা বলছেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার একটি সরকারি সফরের জন্য স্কুলের খেলার মাঠে এমন স্থায়ী ক্ষতির কী দরকার ছিল—তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছেন, ‘ডিসি এলেন কয়েক ঘণ্টা, মাঠ গেল বছরের জন্য!’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm