চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরির ঘটনায় ১২ কিশোর-তরুণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সাতজন প্রকৃতপক্ষে অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও মামলায় তাদের সবারই বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছর।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালা মিয়ার দোকান এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরদিন শনিবার (২৬ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
জন্মনিবন্ধনে অপ্রাপ্তবয়স্ক, মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক
মামলার এজাহার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আশিকুল ইসলাম আকাশের বয়স ১৮ বছর দেখানো হলেও তার জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী প্রকৃত বয়স ১৫ বছর ৬ মাস। সে আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
একইভাবে আকিফুল ইসলাম আকিবের বয়স প্রকৃতপক্ষে ১৬ বছর, আরাফাত হোসেন ১৭, আব্দুল করিম ১৬, আবু হাছনাইন বিজয় ১৬ (২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী), আশরাফুল জামালের বয়স ১৮ বছর হতে বাকি ৩ মাস এবং সজিবুল ইসলাম ওরফে শরীফুল ইসলাম ১৭ বছর বয়সী বলে জন্মনিবন্ধন সনদ থেকে পাওয়া তথ্য হিসাব করে জানা গেছে।
অন্যদিকে সাইফুল ইসলামের বয়স ১৯ দেখানো হলেও তার প্রকৃত বয়স ২২ বছর, মো. ইকবালের বয়স ২০ এবং আব্দুর রহমান ও ফোরকানের বয়স ১৮ ও ১৯ বছরের মধ্যে। আকিফুল ইসলাম আকিবের জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়ায় তার প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ: ‘ভিডিওর আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা’
মামলার এজাহারে বলা হয়, আটককৃতরা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী এবং তারা এলাকায় কথিত ‘বড় ভাইদের’ নেতৃত্বে মৌলভীবাজার এলাকায় হামলার পরিকল্পনা করছিল।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার সময় তারা রাস্তায় মিছিলের মতো করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে টিকটক ভিডিও করছিল।
কর্ণফুলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৬(২), ৮, ৯ ও ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত সবাই চরপাথরঘাটা ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
অভিভাবকদের ক্ষোভ
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রহমানের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফানি ভিডিও বানিয়ে টিকটক করেছিল ছেলেরা। তাতে যদি জেল হয়, তাহলে এখনকার অর্ধেক ছেলেকে জেলে যেতে হবে। রাতভর থানায় বসে থেকেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বেশিরভাগই অপ্রাপ্তবয়স্ক।’
জবাব নেই পুলিশের
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘১২ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
তবে মামলায় যাদের বয়স ১৮ বছর দেখানো হয়েছে, তাদের প্রকৃত বয়স কিভাবে নির্ধারণ করা হলো—জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘আমি জরুরি কাজে বাইরে আছি, ১০ মিনিট পর ফোন দিন।’ তবে পরবর্তীতে ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
ডিজে/সিপি