ঢাকাইয়া আকবর খুনের ঘটনায় মাঝরাতে বড় সাজ্জাদের ভাই ও ভাগ্নে গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর হত্যার ঘটনায় এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মামলার ৬ ও ৮ নম্বর আসামি সাজ্জাদ খান ওরফে বড় সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান গণি সেগুন (৩৪) এবং ভাগ্নে মো. আলভিনকে (৩০)। বড় সাজ্জাদ দুবাই ও ভারতে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সোমবার (২৬ মে) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৭ ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) যৌথ অভিযানে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ‘কিং অব চিটাগাং’ ক্লাব থেকে সেগুন এবং অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে আলভিনকে আটক করা হয়। সেগুনকে গ্রেপ্তার করা হয় তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের মাঝখান থেকে।
র্যাব নিশ্চুপ, নিশ্চিত করেছে পুলিশ সূত্র
যদিও র্যাব-৭ এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য এবং সিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ওসমান গণি সেগুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার তালিতাতলী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জালালী নগর এলাকার মৃত আব্দুল গণি কন্ট্রাক্টরের ছেলে। অপরদিকে আলভিন চান্দগাঁও থানার পশ্চিম ফরিদা পাড়ার মো. জসিমের ছেলে।
হানি ট্র্যাপেই আকবরের মৃত্যু!
গত শুক্রবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে নুসরাত জাহান নামের এক তরুণীর সঙ্গে আকবর ‘হানি ট্র্যাপে’ যান বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা। সেখানেই আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আকবরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবশেষে ২৫ মে ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত আকবর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মঞ্জু মিয়ার ছেলে। এলাকায় তিনি ‘ঢাকাইয়া আকবর’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ইট-বালুর ব্যবসার পাশাপাশি নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বাদি প্রথম স্ত্রী, প্রধান আসামি ইমন
ঘটনার পরদিন (২৬ মে) আকবরের প্রথম স্ত্রী রুপালী বেগম পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর–১২) দায়ের করেন। মামলায় ফটিকছড়ির মোবারক হোসেন ইমনকে (২২) প্রধান আসামি করা হয়। মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২–৩ জনকে আসামি করা হয়।
এই মামলার ৬ নম্বর আসামি হচ্ছেন গ্রেপ্তার হওয়া ওসমান গণি সেগুন এবং ৮ নম্বর আসামি মো. আলভিন।
তদন্তে উঠে আসছে পুরনো দ্বন্দ্ব
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নিহত আকবর বায়েজিদ এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা করতেন এবং আসামিদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের আধিপত্য ও ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সী-বিচে ঘুরতে গেলে রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে পতেঙ্গার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পর্যটন পুলিশ বক্সের সামনে ‘ধাবা রেস্তোরা’র সামনে আকবরকে গুলি করা হয়। গুলি তার হাত, পা, গলা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে।
স্থানীয়রা ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় পথচারী জান্নাতুল বাকী এবং ৮ বছরের শিশু রাতুল ইসলাম মাহিনও গুলিবিদ্ধ হয়।
নিহত আকবরের স্বজনদের অভিযোগ, এই হামলার মূল পরিকল্পনা আসে বড় সাজ্জাদের নির্দেশে। আকবর দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে বড় সাজ্জাদের সহযোগী ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও প্রকাশ করতেন, যা হত্যার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে ধারণা।
ছোট সাজ্জাদ কারাগারে
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হন। ওই মামলার সূত্র ধরে জানা যায়, ২৯ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে দুজন নিহত হন। মূলত সেদিন ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা সারোয়ার হোসেনকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছিলেন, যিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জানিয়েছে, ঝুট ব্যবসা, এলাকা দখল ও সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। সারোয়ার ও আকবর—দুজনেই বড় ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধী পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য নেই, তবে অভিযান চলছে
আকবর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই অমিতাভ দত্ত দুই আসামির গ্রেপ্তার ও অভিযানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এ মামলায় আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেজে/সিপি