জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে বিশ্ব আজ চরম সংকটে। এই সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ ও প্রজন্মগত দায়িত্বশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দেশি-বিদেশি গবেষকরা।

চট্টগ্রাম নগরের হোটেল আগ্রাবাদে শুক্রবার (১ আগস্ট) শুরু হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন (আইসিকা ২০২৫)’। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘আমি: একটি সবুজ পৃথিবীর জন্য’। এতে ১৫টি দেশের দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে ৮ দেশের গবেষকরা ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ৯৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। নারী-পুরুষ অংশগ্রহণের অনুপাত ৬.২:৩.৮, যা পরিবেশবিজ্ঞানে নারীদের ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বের দিকটি স্পষ্ট করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আর ভবিষ্যতের সমস্যা নয়, এটি এখনকার বাস্তবতা। মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
আইসিকা আয়োজক কমিটির সদস্য ড. মোসায় সেলভাকুমার পলরাজ বলেন, ‘এই সম্মেলন শুধু গবেষণার আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং জলবায়ু সহনশীল ও ন্যায্য পৃথিবী গঠনের জন্য আন্তঃসীমান্ত অংশীদারিত্বের প্রয়াস।’
সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় পাঁচটি থিমে বিভক্ত ছিল— Roots & Revolutions, Wild & Well, Voices for Earth, Planet in Balance এবং Green Futures। প্রতিটি সেশনে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ন্যায্যতা, টেকসই প্রযুক্তি ও নীতি উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রথম দিনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গাওসিয়া ডব্লিউ. চৌধুরী, বুয়েটের ড. সারা নওরীন, আইআইএসআর তিরুপতির ড. নন্দিনী রাজামণি, ইউনিভার্সিটি অব মন্টানার ড. নাদিয়া হোয়াইট, পারডু ইউনিভার্সিটির ড. এলিজাবেথ একলুন্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. মোস্তফা কামাল সরকার।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনপদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজন, নারীর অংশগ্রহণ, তথ্যনির্ভর সাংবাদিকতা ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিই সময়ের দাবি।
পরে বক্তব্য দেন কেয়ার বাংলাদেশের প্রধান গবেষক ড. আবু সাঈদ, আইআইটি গৌহাটির ড. অনামিকা বরুয়া, ড. অ্যান্টনি স্টিফেন, ড. শান্তা দত্ত ও ড. অমৃত থাপা। তাঁরা জলবায়ু ন্যায়বিচার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিকল্প জীবিকায়ন, এবং শিক্ষা ও অবকাঠামোর ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেন।
একটি বিশেষ প্যানেলে আলোচিত হয় ‘পরিবেশ বিজ্ঞানে নারীর ভূমিকা’। সেশনটি সঞ্চালনা করেন আফরিদা আসাদ আর পরিবেশ সাংবাদিকতা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শামসুদ্দিন ইলিয়াস।
প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হয় পোস্টার উপস্থাপনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে। শনিবার দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারীরা চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় টেকসই উদ্যোগ পরিদর্শনে যাবেন, যাতে তাত্ত্বিক জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে পরিবেশ বিষয়ে গভীর উপলব্ধি গড়ে ওঠে।