বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয় এড়ালো পায়রা কেন্দ্র, ৪০০ কোটি শোধের পর কয়লা খালাস শুরু

বকেয়া এখনও সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

৪০০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করার পর পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা খালাস শুরু হয়েছে। যদিও আরও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়ে গেছে।

বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকায় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আনা কয়লা জাহাজ থেকে খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে।

জানা গেছে, প্রথম দফায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে পিডিবি। দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আরও ৩০০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বুধবার থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা চারটি জাহাজ থেকে কয়লা খালাস শুরু হয়।

বহির্নোঙরে থাকা চার জাহাজের মধ্যে এমভি কারমেনসিটায় কয়লা রয়েছে ৫৭ হাজার ২৭০ টন, এমভি বিগ গ্লোরিতে ৬০ হাজার টন, এমভি ক্লারায় ৫৫ হাজার ১০০ টন এবং এমভি থিয়োডরি ভেনিয়ামিসে ৬০ হাজার টন কয়লা রয়েছে। পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় দুই লাখ ৩২ হাজার টন কয়লাবাহী এই চারটি জাহাজকে প্রতিদিন প্রায় ৭৩ লাখ টাকা করে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।

এর বাইরে কয়লা খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজমালিকরাও প্রায় ৭২ কোটি টাকা পাবে। এ কারণে তারাও কয়লা খালাসে অনীহা দেখাচ্ছিলেন।

পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত এই ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২০ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল—বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা। চলতি বছরের শুরু থেকে উৎপাদন ধারাবাহিক থাকায় কয়লার আমদানিও বেড়ে যায়। কিন্তু অর্থ পরিশোধে গড়িমসির কারণে কয়লা সরবরাহ, খালাস ও পরিবহনের পুরো প্রক্রিয়াটিই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বর্তমানে প্রতিটি ‘মাদার ভেসেল’ থেকে কয়লা খালাসে গড়ে ২৪-২৫টি ‘লাইটার জাহাজ’ প্রয়োজন হয়। দুটি মাদার ভেসেলের জন্য দরকার পড়ে প্রায় ৫০-৫৫টি লাইটার ট্রিপ। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিশাল অঙ্কের খরচ। কয়লার আমদানি মূল্য, জাহাজ পরিবহন খরচ (ওশান ফ্রেইট) এবং খালাস ও লাইটারিং ব্যয় ছাড়া ডেমারেজ চার্জ হিসেবে প্রতিদিন ১২-১৫ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হয়ে থাকে।

এ ছাড়া ঠিকাদারদের রয়েছে জ্বালানি, জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য অপারেটিং কস্ট। জানা গেছে, যথাসময়ে অর্থ না পাওয়ায় কয়লা সরবরাহকারীরা জাহাজ পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। ফলে কয়লা আমদানি, খালাস এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরো প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

এর আগেও কয়লা সরবরাহকারী চীনের কোম্পানি ‘সিএমসি’ কয়েক দফায় বকেয়া পরিশোধ না করায় সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রভাবে বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি, যেগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। তবে বাস্তবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদাই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো ১১ শতাংশ হলেও মোট ৭ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে এ খাত থেকে। এর বড় অংশই নির্ভর করে পায়রার ওপর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm