চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুর্বৃত্তের হামলার শিকার গাজী আজগর আলীর দু’হাতে অস্ত্রোপচার। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলের ২৬ নম্বর অর্থোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোববার (১৮ মে) সকালে আজগরের দুই হাতের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ মে রাত ৮টার দিকে উপজেলার বুধপুরা বাজার থেকে স্থানীয় যুবক গাজী আজগর আলীকে (৪০) সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র ১০-১৫ জনের দল। বুধপুরা বাজার থেকে তুলে নিয়ে সাইঁদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে কিচির, রামদা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাকে গুরতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
গাজী আজগর আলী বুধপুরা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবুল কাশেমের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি সিএনজি উদ্ধার করেছে।
এদিকে গত শনিবার এ ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত আজগর আলীর স্ত্রী দীপ্তি চৌধুরী বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৪ জনকে এজহারভুক্ত আসামি ও আরও অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে একাধিক মামলার আসামি ও বুধপুরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবদুল হামিদ (৩৭), তারেকুর রহমান রিয়াদ (২৩), আবদুল শুক্কুর (৪৬) ও ট্যাটু সোহেল (৩২)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারের বক্করের দোকান হতে গাজী মো. আজগর আলীকে তুলে নিয়ে যায় কাসেম চেয়ারম্যানের লোক আবদুল হামিদ ও ট্যাটু সোহেলের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। এসময় তাকে সিএনজিযোগে সাইদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দেয়, কিরিচ, রামদা দিয়ে হাতে পায়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এর আগে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী আহমদ বাদি হয়ে গত বছরের ২০ আগস্ট ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৯ আগস্ট রাতে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. নুরুল হাসান বাদি হয়ে সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি, ৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে হয় মামলা করেন।
এসব মামলায় কাশিয়াইশ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে আটক দেখিয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ২০ আগস্ট আদালতে পাঠানো হলে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওইদিন রাতে কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা এলাকার নুর আয়শা বাদি হয়ে পটিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন কাশেম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মামলায় কাশেম চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় প্রায় তিন মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসে কাসেম চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। এলাকায় জবরদখল, চাঁদাবাজি, গ্রামের মানুষজনকে তার লোকজন দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছেন।
মামলার বাদি দীপ্তি বলেন, আমার স্বামীকে এলাকার যেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরতর আহত করেছেন, তাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করছি। অবিলম্বে যেন তাদের গ্রেপ্তার করতে আইনের আওতায় আনা হয়।
পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, বুধপুরা এলাকার এক যুবককে তুলে নিয়ে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় তার স্ত্রী বাদি হয়ে শনিবার রাতে পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিজে