রোজার মর্যাদা ও জান্নাতের বিশেষ দরজা রাইয়্যান

আলহামদুলিল্লাহ! আজ পবিত্র রমজান মাসের ১৩তম দিনের মাগফিরাতের রোজা পালনের সৌভাগ্য লাভ করছি। এই মাসের রোজার মধ্যে এত বেশি বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে যে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আল্লাহতায়ালা নিজেই রোজার পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। রোজার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে রোজাদারদের সম্মানে জান্নাতে বিশেষ দরজা রাখা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা রয়েছে, যার মাধ্যমে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পর এই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং অন্য কেউ এ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।

রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি মহান নিয়ামত। প্রতিটি নেক আমলের নির্ধারিত প্রতিদান রয়েছে, কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, “রোজা শুধু আমার জন্যই এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।” রোজাদার আল্লাহর জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানাহার ত্যাগ করে। এই আমলের প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন।

জান্নাতে প্রবেশের জন্য রোজাদারদের সম্মানে বিশেষ দরজা রাখা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা রয়েছে, যার মাধ্যমে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পর এই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।” এই বিশেষ দরজা রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অনন্য সম্মান।

রমজান মাসে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয় এবং জান্নাতকে সাজানো হয়। এই মাসে রোজা পালনকারীদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খোলা থাকে।

রোজা শুধু আধ্যাত্মিক কল্যাণই বয়ে আনে না, বরং এটি শারীরিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোজা মানবদেহের রোগমুক্তির কারণ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানও রোজার উপকারিতা স্বীকার করে। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি, তেমনি শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকি।

রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা বাকারা)

রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, “রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সুরা বাকারা: ১৮৫)

কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন রোজাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, “হে আমার রব, আমি তাকে দিনে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।” কোরআন বলবে, “হে আমার রব, আমি তাকে রাতে ঘুমোতে দিইনি। আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।”

রোজার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে নেন।”

রমজান মাসে লাইলাতুল কদর নামক একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হয়।

রোজা সেরা আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজার সমকক্ষ কোনো আমল নেই।” রমজান মাসে ওমরাহ পালন করলে হজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধযুক্ত।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে তাঁর ভয় ও ভালোবাসা অর্জন করে রাইয়্যান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm