চট্টগ্রাম মেডিকেলে ‘বকশিশ’ না দেওয়ায় অক্সিজেনে পানি দিতে অবহেলা, নবজাতকের মৃত্যু
আয়া বরখাস্ত, তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিল নিউমোনিয়া আক্রান্ত আট দিনের এক নবজাতক। এর মধ্যে নবজাতকের অক্সিজেনে পানি সরবরাহ কমে যায়। এনআইসিইউতে কর্মরত আয়া কৃষ্ণা দাশ ‘বকশিশ না দিলে’ অক্সিজেনে পানি সরবরাহে আপত্তি জানান। পরে অক্সিজেন স্বল্পতায় মারা যায় নবজাতকটি।
শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। এর আগে গত ৯ মার্চ নবজাতক শিশুটিকে ভর্তি করানো হয়।
নবজাতক শিশুর বাবা কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুল বুনিয়া এলাকার বেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ২০০ টাকা বকশিশ না দেওয়ায় আয়া আমার ছেলের অক্সিজেনে পানি সরবরাহ করেনি।
তবে হাসপাতাল পরিচালক বলছেন, বাচ্চাটির অবস্থা আগে থেকেই ক্রিটিক্যাল মুভমেন্টে ছিল। তারপরও অভিযোগটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত আয়াকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩২ ওয়ার্ডের আয়া, ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে নার্সদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নবজাতক ওয়ার্ডের এনআইসিইউতে সেন্ট্রালি অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে বকশিশ ছাড়া নড়েন আয়া-নার্সরা। এ ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স এবং ওয়ার্ডবয় পিন্টু, মনির, রাশেদ ও কর্মরত আরও ৫-৬ আয়া অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। নবজাতক বাচ্চাদের অভিভাবকরা বকশিশ দিলেই তারা দ্রুত কাজ করে দেন আর না দিলেই ঘটে বিপত্তি। তাদের এমন আচরণের কারণে প্রাণ হারাতে হয় নবজাতকদের—এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশ কিছু ভুক্তভোগীর কাছ থেকে।
এর আগে গত ৭ মার্চ চকরিয়া উপজেলার বেসরকারি জমজম হাসপাতালে নবজাতক ছেলেটির জন্ম হয়। জন্মের ৩ দিনের মাথায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন সে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৯ মার্চ তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
নবজাতকের বাবা বেলার উদ্দিন মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে মেডিকেলে আনার পরও আমার বাচ্চাটার অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেনে পানি সরবরাহ কম ছিল। অক্সিজেনে পানি শেষ হওয়ায় বাচ্চাটি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে মনে হওয়ায় আমি তখন দ্রুত ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা নার্সদের জানাই। তাদের অক্সিজেনে পানি সরবরাহের কথা বলি। তখন নার্সরা আমাকে বলেন আয়ার সঙ্গে কথা বলতে। আমি কৃষ্ণা মাসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ২০০ টাকা বকশিশ চান। আমার মাথা তখন ঠিক ছিল না। আমি প্রতিবাদ করে বলে উঠি, অক্সিজেনে পানি দিতে টাকা লাগবে কেন? বকশিশের টাকা না পেয়ে বাচ্চাটিকে ওইভাবে ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরে বকশিশের টাকা দিলে অক্সিজেনে পানি দেওয়া হয়। এর পরপরই প্রফেসর রাউন্ডে আসলে আমাদের রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। দু’ঘন্টা পর ওয়ার্ডে ঢুকলে আমাদের জানানো হয়, আমাদের বাচ্চা মারা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ডের সর্দার সামশুল আলম বলেন, ‘আসলে এনআইসিইউর অক্সিজেন সাপ্লাই সেন্ট্রালি হয়। অক্সিজেনে পানি সরবরাহের কাজটি করে আয়ারা। ওয়ার্ডে বয়রাও করে।’
নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন জানান, ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামীমা জাহানের সঙ্গে কথা বলেছি। বাচ্চাটি ক্রিটিক্যাল মুভমেন্টে ছিল। এখানে ভর্তির পর থেকেই তাকে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছিল। শনিবার ওই নবজাতক মারা যাওয়ার আগে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল বলেই ওয়ার্ড থেকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে শিশুটির বাবার অভিযোগ আমরা আমলে নিয়েছি। এরপরও ঘটনাটি তদন্তের জন্য বিভাগীয় প্রধানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া দায়িত্বে থাকা আয়াদের অপসারণ করা হয়েছে। এরা আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ওয়ার্ডে কাজ করতেন।
আইএমই/ডিজে