সাংবাদিক জুলকারনাইনের নাম ভাঙিয়ে সক্রিয় প্রতারকচক্র, ছদ্মবেশে সুবিধা বাগানোর অপচেষ্টা
‘আমি কখনও ভয় দেখাই না’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের খান সামির নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসী এই বাংলাদেশি সাংবাদিকের পরিচয় ভাঙিয়ে একদল দুর্বৃত্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোন করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, ভুয়া পরিচয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানের ঘটনাও ঘটছে— এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিক পক্ষের কাছ থেকে।
এছাড়াও সন্দেহ করা হচ্ছে, জুলকারনাইন সায়ের খানকে বিতর্কিত করতে একটি প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করছে।
জুলকারনাইন সায়ের খান বর্তমানে আল জাজিরার আই-ইউনিটের সিনিয়র প্রডিউসার ও রিসার্চ অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর গবেষণা সহযোগী হিসেবেও কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে খ্যাতিমান এই সাংবাদিকের পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারকচক্র নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি নিজেই।
বুধবার (৯ জুলাই) বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত জুলকারনাইন সায়ের বলেন, ‘সম্প্রতি কতিপয় ব্যক্তি আমার নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের ফোন করে নানা ধরনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছেন এবং হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, যা আমার গোচরে এসেছে।’
তিনি স্পষ্ট করে জানান, তার সাথে যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট কিছু মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তার ব্যবহৃত যোগাযোগমাধ্যমগুলো হলো: +44 7796 101276 (সরাসরি ও হোয়াটসঅ্যাপ), +44 7457 404238 (শুধু হোয়াটসঅ্যাপ), ZSK.01 এবং +36 7077 23819 (সিগন্যাল) এবং www.facebook.com/saerzulkarnain (ফেসবুক)।
জুলকারনাইন সায়ের জোর দিয়ে বলেন, ‘এসব মাধ্যম ছাড়া যদি কেউ আমার পরিচয়ে যোগাযোগ করে, তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা প্রতারক। আমি কখনোই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবি করবো না, ভয়ভীতি দেখাবো না। বাংলাদেশ বা অন্যত্র আমার কোনো ব্যক্তিগত প্রতিনিধি বা সহযোগীও নেই।’
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আমার পরিচয়ে অনৈতিক কিছু দাবি করে, অনুগ্রহ করে তাকে বা তাদেরকে শনাক্ত করে নিকটস্থ নিরাপত্তা সংস্থাকে অবহিত করুন। প্রতারকদের এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য আমি কোনোভাবেই দায়ী নই।’
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে ভুয়া পরিচয়ে কেউ যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
জুলকারনাইন সায়ের আল জাজিরা ইনভেস্টিগেটসে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ নিয়ে কাজ করে আলোচনায় আসেন। এই প্রামাণ্যচিত্রের জন্য তিনি ও তার টিম ২০২২ সালে ‘বেস্ট হিউম্যান রাইটস জার্নালিজম’ বিভাগে অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কার পান।
গত বছরের ১২ জুলাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ১৩ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একাউন্ট থেকে অর্থ প্রাপ্তির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি। এরপর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের বৈশ্বিক সম্পত্তি সাম্রাজ্য নিয়ে আল-জাজিরা আই-ইউনিটে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জুলকারনাইন সায়ের ও তার টিম। দীর্ঘ তদন্তের পর যুক্তরাজ্য সরকার গত জুনে জাবেদের সম্পত্তির কিছু অংশ জব্দ করে। চলতি বছরের ১ মে তার তৈরি ‘দ্য মাদার এন্ড দ্যা মনস্টার’ প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারিত হয় আল জাজিরা টেলিভিশনে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
সিপি