মধ্যরাতে চিটাগাং ক্লাবে খুনের আসামির ছেলের বিয়েতে হানা, ছাত্রদের ধাওয়ায় হুলস্থূল

জাহেদুল পালিয়েছেন পেছন দরজা দিয়ে!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ জাহেদুল হকের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে। জাহেদুল বোয়ালখালী উপজেলার সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রের চোখ হারানোর ঘটনায় সম্প্রতি দায়ের করা এক মামলার আসামিও তিনি।

বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল হকের ছেলের বিয়েতে হাজির ছিলেন একজন বিচারকসহ সিএমপির অন্তত তিনজন উপ-কমিশনার।
বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল হকের ছেলের বিয়েতে হাজির ছিলেন একজন বিচারকসহ সিএমপির অন্তত তিনজন উপ-কমিশনার।

শুক্রবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর সাইফুদ্দিন খালেদ রোডে চিটাগাং ক্লাবের সামনে শতাধিক ছাত্রজনতা জড়ো হন। তাদের অভিযোগ, ছেলের বিয়েতে ১২ মামলার পলাতক আসামি জাহেদুল হক উপস্থিত হয়েছেন। জাহেদুল হক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একজন পরিচালক।

মধ্যরাতে চিটাগাং ক্লাবে খুনের আসামির ছেলের বিয়েতে হানা, ছাত্রদের ধাওয়ায় হুলস্থূল 1

ছাত্ররা অভিযোগ করেন, শুরুতে চট্টগ্রাম ক্লাব কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। একপর্যায়ে তারা লোকজন জড়ো করে তাদের ওপর হামলার চেষ্টাও করে।

মধ্যরাতে চিটাগাং ক্লাবে খুনের আসামির ছেলের বিয়েতে হানা, ছাত্রদের ধাওয়ায় হুলস্থূল 2

চিটাগাং ক্লাবের বর্তমান চেয়ারম্যান শোভন এম শাহাবুদ্দিন রাজ। তিনি আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের স্বামী।

মধ্যরাতে চিটাগাং ক্লাবে খুনের আসামির ছেলের বিয়েতে হানা, ছাত্রদের ধাওয়ায় হুলস্থূল 3

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা চট্টগ্রাম মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হাতে জাহেদুল হকের উপস্থিতির একাধিক প্রমাণ রয়েছে। ছেলের বিয়েতে তিনি অংশ নিয়েছেন, সেই ছবি আমাদের কাছে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাসহ অন্তত ১২টি মামলার পলাতক আসামি হয়েও দিব্যি চট্টগ্রাম ক্লাবে ছেলের বিয়ে করছেন—এটা আইন ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে তামাশা।’

সরেজমিনে দেখা যায়, রাত ১২টার দিকে কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল করিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় ক্লাবের বাইরে উপস্থিত ছাত্রজনতা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা প্রতিটি গাড়ি চেক করতে শুরু করেন। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ক্লাবের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, “অপরাধী ধামাচাপা নয়, বিচার চাই—বিচার চাই!”

তবে চট্টগ্রাম ক্লাবের সদস্য হওয়ায় জাহেদুল হককে ক্লাবের ‘গেস্ট রুমে’ লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ছাত্ররা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের ওই বিয়েতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) তিনজন উপ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন অতিথি হিসেবে। অভিযুক্ত জাহেদুল হক পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই চিটাগাং ক্লাবের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান পুলিশের লোকদেখানো অভিযান শুরুর আগেই। চট্টগ্রাম আদালতের একজন বিচারকও সেই বিয়েতে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন বলে তারা জানান।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ মে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বোয়ালখালী উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ জাহেদুল হক। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর তিনি সেই পদ হারান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm