সেলুন কর্মচারী-দিনমজুরকে ‘ব্যবসায়ী’ সাজিয়ে ৫৬ কোটি লোপাট, টাকা গেল জাবেদ পরিবারের হাতে
জাবেদের ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে দুদকের ৮ মামলা
গ্রামের সেলুন কর্মচারী, কৃষক, অটোরিকশাচালক ও ফুটবল খেলোয়াড়দের ‘ব্যবসায়ী’ সাজিয়ে ব্যাংক থেকে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা। সময়টা ২০২৩ সাল, স্থান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল)। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রায় ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঘুরে যায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবারের নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এই অভিযোগে জাবেদের ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। নামেমাত্র ঋণগ্রহীতা হলেও প্রকৃত অর্থে ঋণের অর্থ যায় জাবেদ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজে। এভাবে ইউসিবিএল ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব ঋণ অনুমোদনের পর টাকা সরাসরি স্থানান্তর করা হয় জাবেদ পরিবারের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হিসাবে। পরে সেই অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ আটটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলাগুলোর বিবরণে দেখা যায়, আটটি মামলার প্রতিটিতেই আসামি করা হয়েছে জাবেদের ছোট ভাই ও ইউসিবিএলের তৎকালীন পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনিকে। সাতটি মামলায় আসামি হয়েছেন ব্যাংকের আরেক পরিচালক ও জাবেদের ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী। তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে জাবেদের বোন ও ইউসিবিএলের সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরীকে।
এ ছাড়া ইউসিবিএলের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য এবং জাবেদ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মচারীকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সেলুন কর্মচারী রাজধন সুশীল, একাধিক কৃষক, একজন প্রবাসী, একজন ফুটবল খেলোয়াড় এবং একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য ব্যবহার করে তাদের নামে ঋণ হিসাব খোলা হয়। ঋণ অনুমোদনের পর ওই টাকা সরাসরি জাবেদ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
দুদক বলছে, এসব অনিয়ম সংঘটিত হওয়ার সময় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তখন ইউসিবিএলে তার এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের প্রভাব ছিল নিরঙ্কুশ। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে জাবেদের ভাই-বোন ও ঘনিষ্ঠ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা মিলেমিশে ঋণ অনুমোদন এবং অর্থ আত্মসাৎ করেন।
মামলাগুলোতে দণ্ডবিধির একাধিক ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে একই কৌশলে প্রায় ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক। পাশাপাশি ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে ছয়টি মামলাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই গত ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। পরে গণমাধ্যমে তার লন্ডনে অবস্থানের তথ্য প্রকাশ পায়।


