১৮০ শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরার পর উত্তপ্ত চবিতে ১৪৪ ধারা, পরিস্থিতি থমথমে
উস্কানির অভিযোগে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের দিন-রাত সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্মস্থান ওই উপজেলার আওতাধীন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। রোববার (৩১ আগস্ট) বেলা তিনটার দিকে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উপজেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব দিক থেকে রেলগেট পর্যন্ত উভয় দিকের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ ছাড়া ২ নম্বর গেট এলাকায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণজমায়েত কিংবা অস্ত্র পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উল্লিখিত এলাকায় পাঁচজনের বেশি ব্যক্তি একসঙ্গে চলাচল করতে পারবেন না।
এর আগে শনিবার রাতের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ রোববার দুপুরে আবারও শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন জোবরা গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের আগে দুই পক্ষ সকাল থেকে অন্তত দেড় ঘণ্টা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের হামলায় অন্তত ১০ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, হামলায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামের অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তার মাথা, হাত, পা ও পেটে অন্তত ছয়টি কোপের আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে হাত ও মাথার কোপ সবচেয়ে গুরুতর।।
সংঘর্ষ চলাকালে হামলা চালানো হয় সাংবাদিকদের ওপরও। হামলায় আহত হয়েছেন ডেইলি স্টারের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সিফায়েত উল্লাহ সিফাত ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহফুজ আহমেদ, দেশ টিভির রিপোর্টার মোহাম্মদ নাজিম ও ক্যামেরাপার্সন হাসান উল্লাহ, আরটিভির ইমু খান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির পিয়াল ঘোষ, দীপ্ত টিভির সাইমুন মুরাদ, সমকালের চবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসান।
এর আগে শনিবার রাতের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে ৩৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্তত ১০ জন এখনও মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।
রাতের পর দিনেও আবার হামলা
জানা গেছে, আজ রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এক পাশে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন, অপর প্রান্তে অবস্থান নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন এবং প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও প্রক্টর। এ সময় তারা বিক্ষোভকারীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে এ সময় জানান, গত রাতে খবর পেয়ে নিরাপত্তাপ্রধান আবদুর রহিম, সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেনসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী সেখানে গিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করে। তিনি অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হলেও তা সময়মতো পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই কিছুক্ষণের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। তবে সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।
উস্কানির অভিযোগে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর আগে রোববার (৩১ আগস্ট) সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে চবি শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেন উদয় কুসুম বড়ুয়া। পাশাপাশি হামলার ইন্ধন দেয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উদয় কুসুম বড়ুয়াকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফের বিবৃতি
বিকেল পৌনে তিনটায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত থেকেই তৎপর সরকার। গ্রামবাসীর বাঁধায় কয়েকদফা চেষ্টা করেও তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানে পৌঁছাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরবর্তীতে ফোর্স পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। চবি ছাত্রনেতাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে এখনো সংঘাত চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করুন। সন্ত্রাসীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।’
ফটক আটকে বিক্ষোভ, প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের পর ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দুই ছাত্র সংগঠন। রোববার সকালে মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করে ইসলামী ছাত্রশিবির। অন্যদিকে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট কর্মসূচি পালন করে। একই সময়ে সংঘর্ষের প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা চট্টগ্রাম–নাজিরহাট রেলপথ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারীমুখী সড়ক অবরোধ করেন।
জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে শিবিরের নেতা-কর্মীরা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন—শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ ও ক্যাম্পাস এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তাচৌকি বসানো।
সকাল ৯টার দিকে একই সময়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এই ভবনেই উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দপ্তর অবস্থিত। জোটের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও ইউপিডিএফ–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রয়েছে। বেলা ১১টার দিকে তারা কর্মসূচি শেষ করেন।
অন্যদিকে সংঘর্ষের জন্য শিক্ষার্থীদের দায়ী করে বিচার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা সকাল থেকেই সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারীগামী সড়ক বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটমুখী রেললাইনও অবরোধ করে রাখা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথে এই অবরোধ চলছিল।
সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কয়েক দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিভাগগুলোর ক্লাস চলমান থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের মাধ্যম শাটল ট্রেন নিয়মিত সূচিতে চলবে বলে জানানো হয়েছে।
রাতভর দফায় দফায় গ্রামবাসীর হামলা
এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। শনিবার (৩০ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ২ নম্বর গেট এলাকার এই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম এসে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয়।
সূত্রপাত ছাত্রীকে মারধর থেকে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন শাহাবুদ্দীন মেনশন ভবনে এক নারী শিক্ষার্থী বাসায় ফেরেন। দারোয়ান গেট খুলতে দেরি করলে তার সঙ্গে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে দারোয়ান ওই শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন এবং মারধর করেন।
ভুক্তভোগী দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বাসায় ফিরি। গেট খোলার জন্য অনেকক্ষণ ডাকতে থাকলেও দারোয়ান দরজা খোলেননি। পরে আমার রুমমেটরা ডাক দিলে গেট খোলা হয়। তখন তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং আমার ঘাড়ে চড় মারেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।’
এ ঘটনার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে আটক করতে যায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় এবং পরিস্থিতি দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়।
দফায় দফায় হামলা
শিক্ষার্থীর ওপর স্থানীয়দের রাত সোয়া ১২টার দিকে শুরু হওয়া হামলা ভোররাত পর্যন্ত চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক দফায় সংঘর্ষে স্থানীয়রা দা, রামদা, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সংঘর্ষে আহত হয়ে অন্তত ৪০ জনকে চবির মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তবে গুরুতর আহত ১০ জনকে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, ‘৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ধারালো অস্ত্রের কোপ খেয়েছেন।’
আহতদের মধ্যে শিক্ষক ও ছাত্রনেতাও
আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন আছেন। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন গুরুতর জখম হন। চোখের নিচে ঘুষি ও আঘাতের কারণে তার রক্তপাত হচ্ছিল। তার ক্ষতস্থানে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেইন এবং নিরাপত্তা প্রধান আবদুর রহিম আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলাকারীরা প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি, পুলিশের টহলগাড়ি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
প্রক্টরিয়াল বডির অসহায় অবস্থা
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, প্রথম দেড় ঘণ্টা তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষ চরমে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে বহু শিক্ষার্থী আহত। সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী, নাজমুল হোসেন এবং নিরাপত্তা প্রধান রহিম ভাই আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই আহত। প্রক্টোরিয়াল বডির গাড়ি, পুলিশের টহলগাড়ি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ চাইলে তারা সময়মতো আসতে পারেনি। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’
প্রশাসনের ব্যাখ্যা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত ১২টার পর একাধিক টিম পাঠানো হলেও শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত থাকায় তাদের একত্র করা যায়নি বলে দাবি করেছেন প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফ। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পর্যাপ্ত ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণ
সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইন পুলিশকে নিয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা ২ নম্বর গেটে প্রবেশ করতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরো এলাকা তখন স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাত আড়াইটার পর আবারও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলা হয় তিন সপ্তাহ আগেও
এর আগে গত ৮ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়রা হামলা চালায়। ওই ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী আহত হন, এর মধ্যে একজনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর প্রশাসনের কেউ না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চাঁদা দাবি ও দোকান হস্তান্তর নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ওই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের একটি দোকানের আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে কিছু শিক্ষার্থী নতুনভাবে তা ভাড়া নেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই দোকানটি দখল নিতে এবং চাঁদা আদায়ের জন্য স্থানীয় কয়েকজন লোক যাদের নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের কর্মকর্তা বাবুল তার লোকজন নিয়ে এসে চাঁদা দাবি করেন এবং দোকান দখলের চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা তাতে রাজি না হলে আমাদের ওপর হামলা করা হয়।
সিপি