মৃত কাউন্সিলর থেকে বেছে বেছে শিল্পপতিরা, চট্টগ্রামে আন্দোলনের মামলা ঘিরে নতুন রহস্য

এক বছর এক মাস পর হঠাৎ মামলা

২০২১ সালের ১৮ মার্চ মারা যান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। তার মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক এই কাউন্সিলরকে। ঘটনার এক বছর পর ১৮১ জনের নামে করা এ মামলার ১৫০ নম্বরে রয়েছে তার নাম। মৃত এই কাউন্সিলর ২০২৪ সালের ‘নুরুল্লাহ হত্যাচেষ্টায় সরাসরি জড়িত ছিলেন’ বলে বাদি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হামলার অভিযোগে হত্যাচেষ্টা মামলাটি দায়ের করেন একেএম নুরুল্লাহ নামে এক যুবক। তিনি দাবি করেছেন, দীর্ঘ চিকিৎসা ও আসামিদের নাম-পরিচয় সংগ্রহে সময় লাগায় মামলাটি করতে দেরি হয়েছে।

নুরুল্লাহ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার বগাদিয়া বিন্নাগাঁও গ্রামের মো. রতন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি এলাকায় বসবাস করেন।

আদালত বাদির বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, একেএম নুরুল্লাহর করা এই মামলায় ১৫০ নম্বর আসামি করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে। অথচ ৬৯ বছর বয়সে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এই মামলায় ৮৯ নম্বরে কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি ফজলুল কাদেরও আসামি। অথচ ফজলুল কাদের কোতোয়ালী থানার ওসি হন ওই ঘটনার অনেক পরে। এছাড়া সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

১৬ ও ৫৪ নম্বরে সাতকানিয়ার দেলোয়ার হোসেনের নাম দুবার করে এসেছে। একইভাবে ৪৪ নম্বর এবং ১৫৩ নম্বরে সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসী বেগম মুন্নির নামও এসেছে দুবার।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদি একেএম নুরুল্লাহ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বেধড়ক লাঠিচার্জে তিনি গুরুতর আহত হন। ওই রাতেই নগরীর পাঁচলাইশে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার দুই পা থেকে ১৬টি বুলেট বের করা হয়। এরপরও ১২-১৩টি বুলেট তার শরীরে রয়ে গেছে।

আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আওয়াল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।

এছাড়া আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, সাইফপাওয়ার টেকের এমডি তরফদার রুহুল আমিন, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমদ সিদ্দিক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ আরও অনেকে।

সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রুহেল, দিদারুল আলম, আবদুর রহমান বদি, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, এস এম আল মামুন, এম এ লতিফ, আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী ও মহিউদ্দিন বাচ্চু।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm